সিন্ধুতীরে কবিতা – সহজ আলোচনা
আমাদের আজকের আলোচ্য বিষয় সৈয়দ আলাওল রচিত সিন্ধুতীরে কবিতাটি। দশম শ্রেণির জন্য পাঠ্য এই কবিতা থেকে আমরা প্রাসঙ্গিক তথ্যসহ নানা প্রশ্নের উত্তর জেনে নেব। আমরা এর আগে অদল বদল গল্প নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা করেছি। তাছাড়া আমাদের এই ওয়েবসাইটেই পেয়ে যাচ্ছ, নানা মক টেস্ট। চলো, আমরা আজকের বিষয়ের তথ্যগুলি তোমাদের জন্য তুলে ধরি।
সিন্ধুতীরে কবিতার উৎস
সৈয়দ আলাওলের লেখা ‘পদ্মাবতী’ কাব্য।
প্রাসঙ্গিক তথ্য
১. আলোচ্য কাব্যাংশে অচৈতন্য অবস্থায় ছিল পদ্মাবতী ও তার চারজন সখী।
২. পদ্মাবতী মূলকাব্যের কেন্দ্রীয় চরিত্র এবং রত্নসেনের স্ত্রী।
৩. পদ্মাবতীরা অচৈতন্য অবস্থায় যে নগরীতে উপস্থিত হন তাকে বলা হয়েছে ‘দিব্য পুরী’।
৪. দিব্য পুরীর বৈশিষ্ট্য হল – অবস্থান ‘জলের মাঝারে’ এক ‘মনোহর দেশ’। সেখানে কোন দুঃখ-ক্লেশ নেই। সর্বদা সত্য ধর্ম আর সদাচার বিরাজমান।
৫. কাব্যাংশে উল্লেখিত দিব্য পুরীতে থাকে পদ্মা নামে এক সমুদ্র কন্যা।
৬. পদ্মাবতী ও তার সখীরা সিন্ধুতীরে একটি মাঞ্জসে (ভেলায়) চৈতন্যহীন অবস্থান ছিল।
৭. সমুদ্রকন্যা পদ্মা পদ্মাবতী ও তার সখীদের দেখেছিল প্রত্যুষে, উদ্যানে আসার সময়।
৮. সমুদ্রকন্যা পদ্মা পদ্মাবতীকে স্বর্গ-সুন্দরী রম্ভার সঙ্গে তুলনা করেছে।
৯. সমুদ্রকন্যা পদ্মা নিজেকে ‘দুখিনী’ বলেছে।
১০. সমুদ্রকন্যা পদ্মা অচৈতন্য পদ্মাবতী ও তার সখীদের চিকিৎসা করেছিল অগ্নি জ্বেলে, তন্ত্র-মন্ত্র সহযোগে এবং মহৌষধি দ্বারা।
১১. সমুদ্রকন্যা পদ্মার চার দণ্ডের প্রচেষ্টায় পদ্মাবতী সহ অচৈতন্য পাঁচজনেই প্রাণ ফিরে পায়।
১২. কাব্যাংশের শেষে মাগন ঠাকুরের কথা উল্লেখ করেছেন কবি।
প্রশ্নোত্তর পর্ব
১. “রূপে অতি রম্ভা জিনি / নিপতিতা চেতন রহিত” – কার কথা বলা হয়েছে ? বিষয়টি ব্যাখা কর।
উওরঃ উদ্ধৃত অংশে সমুদ্রতীরে অচেতন অবস্থায় পরে থাকা পদ্মাবতীর কথা বলা হয়েছে।
সমুদ্রকন্যা পদ্মা যখন সকালবেলায় সখীসহ উদ্যানের পথে যাচ্ছিলেন, সেই সময় সমুদ্রের ধারে একটি মাঞ্জস ভেসে আসতে দেখে কৌতুহলী হয়ে তিনি সখীদের সাথে দ্রুত সেই স্থানে যান। সেখানে পৌঁছে তিনি দেখেন এক অপরূপা কন্যা মাঝে এবং তার চারপাশে চারজন সখী অচেতন হয়ে পরে আছেন। মাঝের কন্যাটির রূপ এতটাই সুন্দর ছিল যে, তা স্বর্গের অপ্সরা রম্ভার সৌন্দর্যকেও হার মানিয়ে দেয়। এই প্রসঙ্গেই উক্তিটির অবতারণা।
২. “অনুমান করে নিজ চিতে” – কার কোন অনুমানের কথা এখানে বলা হয়েছে ?
উওরঃ প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে সমুদ্রসুতা পদ্মার অনুমানের কথা বলা হয়েছে।
সমুদ্র-দুর্যোগের কবলে পড়ে নৌকাডুবির পর পদ্মাবতী তার চারজন সখীসহ অচেতন অবস্থায় একটি ভেলায় ভাসতে ভাসতে সমুদ্রকন্যা পদ্মার বাসস্থানের সামনে এসে পৌঁছায়। সমুদ্রকন্যা পদ্মা সখীসহ উদ্যানের পথে যাত্রাকালে মাঞ্জস দেখে কৌতুহল বশত এগিয়ে যায় এবং অচেতন অবস্থায় উক্ত পাঁচজনকে দেখতে পায়। সেখানে অচেতন পদ্মাবতীর সৌন্দর্য দেখে পদ্মা অনুমান করে যে, উনি নিশ্চয়ই স্বর্গের কোনো অপ্সরা, যিনি ইন্দ্রের শাপে স্বর্গভ্রষ্ট হয়ে পৃথিবীতে এসেছেন। আলোচ্য অংশে এই অনুমানের কথাই বলা হয়েছে।
৩. “কন্যারে ফেলিল যথা” – কন্যাটি কে? তাকে কোথায় ফেলা হয়েছিল ?
উওরঃ আলোচ্য অংশে কন্যা বলতে চিতোরের রাজা রত্নসেনের স্ত্রী পদ্মাবতীর কথা বলা হয়েছে।
চিতোর-রাজ রত্নসেন তাঁর স্ত্রী পদ্মাবতীসহ জলপথে নিজ দেশে ফেরার পথে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হন। তাঁদের নৌকা সেই সামুদ্রিক ঝড়ে ভেঙে যায় এবং রত্নসেন একটি ভেলায় সখীসহ পদ্মাবতীকে তুলে দেন। এরপর সেই ভেলা ভাসতে ভাসতে একটি দিব্যপুরীতে এসে পৌঁছায় যা সমুদ্রবেষ্টিত। সেই দিব্যপুরী ছিল সমুদ্রকন্যা পদ্মার বাসভূমি। আলোচ্য অংশে এই স্থানের কথাই বলা হয়েছে।
৪. “অতি মনোহর দেশ”- এই মনোহর দেশের সৌন্দর্যের পরিচয় দাও।
উওরঃ সৈয়দ আলাওল তাঁর ‘সিন্ধুতীরে’ কাব্যাংশে একটি সমুদ্রঘেরা দিব্যপুরীর বর্ননা করেছেন। এই দিব্যপুরীকেই কবি ‘অতিমনোহর দেশ’ বলে তুলে ধরেছেন। এই মনোহর দেশের বর্ননায় কবি জানিয়েছেন এই দেশে কোনো দুঃখ কষ্ট নেই, এখানকার মানুষ অত্যন্ত সৎ চরিত্রের। দেশটি পর্বত দ্বারা পরিবেষ্টিত। এখানে সুগন্ধি ফুল ও সরস ফলের প্রাচুর্যে ভরপুর এক উদ্যান রয়েছে। এই দিব্যপুরীতে আছে এক প্রাসাদ যা সোনা ও নানা রত্নে পরিপূর্ণ। আলোচ্য অংশে এই দেশের কথাই বলা হয়েছে।
৫. “দিব্যপুরী সমুদ্র মাঝার”- কোন পুরীকে দিব্য পুরী বলা হয়েছে? এমন বলার কারন কী?
উওরঃ সৈয়দ আলাওল রচিত ‘সিন্ধুতীরে’ কাব্যাংশে বর্নিত সমুদ্রকন্যা পদ্মার আবাস সমুদ্রবেষ্টিত একটি দ্বীপে। এখানে সেই দ্বীপের কথাই বলা হয়েছে।
‘দিব্য’ শব্দের অর্থ ঐশ্বরিক এবং ‘পুরী’ শব্দের অর্থ হল নগরী। কবির বর্ননায় আমরা জানতে পারি যে, সমুদ্রঘেরা এই দ্বীপটি পর্বত দ্বারা বেষ্টিত এবং উক্ত স্থানটি অত্যন্ত মনোহর। এখানে দুঃখ নেই, কষ্ট নেই। এখানে সদাচারী মানুষের বাস। এখানে একটি সোনা ও রত্নখোচিত প্রাসাদ রয়েছে, সমগ্র স্থানটি স্বর্গের মতোই সুন্দর। তাই কবি এই স্থানটিকে ‘দিব্যপুরী’ বলেছেন।

৬. “পঞ্চকন্যা পাইল চেতন”- কীভাবে পঞ্চকন্যা চেতন ফিরে পেয়েছিল?
উওরঃ সমুদ্রতীরে সখীসহ পদ্মাবতীকে মাঞ্জসে ভাসতে দেখে সমুদ্রকন্যা পদ্মা তাদের জন্য পুনর্জীবন প্রার্থনা করেন। এরপর পদ্মা ও তার সখীরা সেই পঞ্চকন্যার চেতন ফেরানোর জন্য উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। তারা সখীসহ পদ্মাবতীর দেহ কাপড়ে ঢেকে অন্ত্রমন্ত্র ও নানা ঔষধি প্রয়োগ করে তাদের পা, মাথাইয় গরম সেক দেওয়া হয়। এভাবে অবিরাম চারদন্ড চিকিৎসা করার পর সখীসহ পদ্মাবতী জ্ঞান ফিরে পান।
৭. “দেখিয়া রূপের কলা, বিস্মিত হইল বালা”- কার রূপের কথা বলা হয়েছে? তার রূপ দেখে কেন বিস্মিত হয়েছিল?
উওরঃ প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে চিতোররাজ রত্নসেনের স্ত্রী পদ্মাবতীর রূপের কথা বলা হয়েছে। পদ্মাবতীর রূপ দেখে সমুদ্রকন্যা পদ্মা বিস্মিত হয়েছিল।
সমুদ্র দুর্যোগের কবলে পড়ে নৌকাডুবির পর পদ্মাবতী তার চারজন সখীসহ অচেতন অবস্থায় একটি ভেলায় ভাসতে ভাসতে সমুদ্রকন্যা পদ্মার বাসস্থানের সামনে এসে পৌঁছায়। সমুদ্রকন্যা পদ্মা সখীসহ উদ্যানের পথে যাত্রাকালে সেই সময় মাঞ্জস দেখে কৌতুহল বশত এগিয়ে যায় এবং অচেতন অবস্থায় উক্ত পাঁচজনকে দেখতে পায়। সেখানে অচেতন পদ্মাবতীর সৌন্দর্য দেখে পদ্মা অনুমান করে যে, উনি নিশ্চয়ই স্বর্গের কোনো অপ্সরা, যিনি ইন্দ্রের শাপে স্বর্গভ্রষ্ট হয়ে পৃথিবীতে এসেছেন। পদ্মাবতীর রূপলাবণ্য দেখে সমুদ্রকন্যা পদ্মা অবাক হয়ে যান।
৮. “বিধি মোরে না কর নৈরাশ”- বক্তা কে? তার এমন মন্তব্যের কারণ কী?
উওরঃ উদ্ধৃতিটির বক্তা হলেন সমুদ্রকন্যা পদ্মা। সমুদ্রকন্যা পদ্মা যখন সকালবেলায় সখীসহ উদ্যানের পথে যাচ্ছিলেন, সেই সময় সমুদ্রের ধারে একটি মাঞ্জস ভেসে আসতে দেখে সেখানে যান, পৌঁছে তিনি দেখেন এক রূপবতী কন্যা সহ তার চারজন সখী অচেতন হয়ে পরে আছেন। তাদের বেশভূষা ও চেহারা দেখে পদ্মা বুঝতে পেরেছিলেন যে ঈশ্বর সদয় না হলে এদের বাঁচানো সম্ভব নয়। এই কারনে পদ্মা একমনে ঈশ্বরের কৃপা প্রার্থনা করে যাতে ঈশ্বর পদ্মাবতীর জ্ঞান ফিরিয়ে দেন। এই প্রসঙ্গেই আলোচ্য উদ্ধৃতিটির অবতারণা।