রাধারাণী গল্প – বিষয়বস্তু ও প্রশ্নোত্তর
আমাদের আজকের আলোচ্য বিষয় নবম শ্রেণির রাধারাণী গল্প। এই আলোচনায় পাঠ্য গল্পের মূল বিষয়বস্তু ও নানা ধরনের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর পাবে ছাত্রছাত্রীরা। আমরা এর আগে নবম শ্রেণির বাংলা সাহিত্য সঞ্চয়নের অন্যান্য পাঠ্যের প্রশ্নোত্তর আলোচনা করেছি। আগ্রহীরা তা দেখে নিতে পারো।
রাধারাণী গল্প বিষয়বস্তু
রাধারাণী পিতৃহীন। সে শ্রীরামপুরে মায়ের সঙ্গে থাকে। তাদের আর্থিক অবস্থা পূর্বে স্বচ্ছল থাকলেও বর্তমানে বিশেষত রাধারাণীর পিতার মৃত্যুর পর এক মোকদ্দমার কারণে দুর্বল হয়ে পড়ে। তাদের এখন অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করতে হয়। রাধারাণীর বিধবা মায়ের শারীরিক অবস্থাও খুব একটা ভালো নয়। মায়ের সুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয় পথ্য কেনারও সঙ্গতি নেই রাধারাণীর।
এই সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে রাধারাণী তার মায়ের পথ্যের টাকার জন্য বনফুলের মালা গেঁথে রথের মেলায় যায়, বিক্রির জন্য। কিন্তু মেলা জমে ওঠার আগেই বৃষ্টি আসে, মেলা ভেঙে যায়। রাধারাণীর বহুকষ্টে গাঁথা মালা বিক্রি হয়না। সে কাদামাখা পথে কাঁদতে কাঁদতে অন্ধকারেই বাড়ি ফিরছিল।
এই বাড়ি ফেরার পথেই তার সাক্ষাৎ হয় এক দয়ালু ব্যক্তির সঙ্গে। লোকটি রাধারাণীর জীবনকাহিনি এবং মেলায় আসার উদ্দেশ্য শোনার পর তার মালাটি কিনে নেয়। মালার মূল্য হিসেবে সে পয়সার পরিবর্তে টাকা দেয়। রাধারাণী অনুমান করে লোকটি তাকে টাকা দিয়েছে। যদি তাই হয় তাহলে সে তা ফিরিয়ে দেবে এমনটা জানায়। কাহিনিতে আমরা দেখি, শুধু টাকাই নয়, রাধারাণীর পড়বার জন্য যথেষ্ট কাপড় না থাকায় সেই লোকটি রাধারাণীর জন্য একটি কাপড় কিনেও পাঠিয়ে দেয়। এখানেই শেষ নয়, রাধারাণী ঘর ঝাঁট দেওয়ার সময় একটি নোটও পায় যাতে সেই লোকটির নাম লেখা ছিল – রুক্মিণীকুমার রায়। পরে অনেক সন্ধান করেও রাধারাণী ঐ নামের কোনো ব্যক্তির সন্ধান পায়না। তারা রুক্মিণীকুমারের দেওয়া নোটটি সযত্নে তুলে রাখে।
এককথায় প্রশ্নোত্তর
১. বঙ্কিমচন্দ্রের ‘রাধারাণী’ রচনায় বালিকাটি কোথাকার রথ দেখতে গিয়েছিল ?
উঃ মাহেশের
২. বঙ্কিমচন্দ্রের রাধারাণী গল্পে বালিকাটির বয়স কত ?
উঃ দশ এগারো বছর
৩. রাধারাণীর মা মকদ্দমায় হারলে কত টাকার সম্পত্তি হারায় ?
উঃ দশ লক্ষ টাকার
৪. রাধারাণী কী কারণে মালা বিক্রী করার পরিকল্পনা নেয় ?
উঃ মায়ের পথ্য কেনার জন্য
৫. রাধারাণী যে মালা বিক্রয় করতে চেয়েছিল তার ফুল কোথায় পেয়েছিল ?
উঃ বন থেকে সংগ্রহ করেছিল
৬. ‘লোক আর জমিল না’ – লোক না জমার কারণ কী ?
উঃ বৃষ্টি হয়েছিল বলে
৭. রাধারাণী নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছিল ?
উঃ সে দুঃখীলোকের মেয়ে, তার কেউ নাই, কেবল মা আছে
৮. রাধারাণীর বাড়ি কোথায় ছিল ?
উঃ শ্রীরামপুর
৯. রাধারাণী যে মালা গেঁথেছিল তার মূল্য কত ?
উঃ এক পয়সা
১০. রাধারাণীর সঙ্গে দেখা হওয়া লোকটির মতে রাধারাণীর মালার দাম কত ?
উঃ চার পয়সা
১১. রাধারাণীর সঙ্গে দেখা হওয়া লোকটির নাম কী ছিল ?
উঃ রুক্ষ্মিণীকুমার
১২. ‘রাধারাণী’ রচনায় কাকে ‘পোড়ারমুখো কাপুড়ে মিনসে’ বলা হয়েছে ?
উঃ পদ্মলোচন সাহাকে
১৩. রাধারাণী গল্প অনুসারে সহৃদয় ব্যক্তিটির নাম কী ?
উঃ রুক্ষ্মিণীকুমার
১৪. ‘সে নাই — চলিয়া গিয়াছে’ কার সম্পর্কে বলা হয়েছে ?
উঃ রুক্ষ্মিণীকুমার সম্পর্কে
১৫. রুক্মিণীকুমারকে কে ‘দাতা’ বলেছে ?
উঃ রাধারাণীর মা
১৬. কুটিরের আগল ঠেলে শোরগোল করেছিল কে ?
উঃ পদ্মলোচন
১৭. পদ্মলোচন রুক্মিণীকুমারের কাছে কাপড়ের দাম বাবদ কত টাকা নিয়েছিল ?
উঃ আট টাকা চোদ্দো আনা
১৮. রাধারাণীর জন্য কেনা রুক্মিণীকুমারের কাপড়টির প্রকৃত দাম কত ছিল ?
উঃ চার টাকা
১৯. রুক্মিণীকুমারের দেওয়া নোটে রাধারাণীর নাম লেখা আছে একথা কে জানিয়েছিল ?
উঃ রাধারাণীর মা
২৫. ‘আমি বলি তোমাদের কুটুম্ব’ – রাধারাণী গল্পে কে কার সম্পর্কে এ কথা বলেছে ?
উঃ পদ্মলোচন রুক্মিণীকুমার সম্পর্কে
ব্যাখ্যাধর্মী প্রশ্নোত্তর
১. ‘অগত্যা রাধারাণী কাঁদিতে কাঁদিতে ফিরিল।’ – রাধারাণী কেন কাঁদতে কাঁদতে বাড়ির পথ ধরল ?
উঃ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের রাধারাণী গল্প -এর মুখ্য চরিত্র বালিকা রাধারানী তার অসুস্থ মায়ের জন্য পথ্য কিনতে চায়। অর্থ জোগাড়ের জন্য সে মাহেশের রথের মেলায় বনফুলের মালা বিক্রির উদ্দেশ্যে গিয়েছিল। কিন্তু ‘রথের টান’ অর্ধেক হওয়ার সাথে সাথে বৃষ্টি নামে এবং লোকের ভিড় কমে যায়। এরপর সন্ধ্যে নামলেও রাধারাণীর মালা অবিক্রীত অবস্থায় থেকে যায়। রাতের অন্ধকার নামলে হতাশ হয়ে ভগ্নহৃদয়ে সে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ির পথ ধরে।
২. “তাহারা দরিদ্র, কিন্তু লোভী নহে।” — মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।
উঃ মাহেশের রথের মেলা থেকে ফেরার পথে রাধারাণীর সঙ্গে এক অজ্ঞাত ব্যক্তির পরিচয় হয়। রাধারাণীর সমস্ত কাহিনি শুনে সে তার কাছ থেকে বনফুলের মালা কিনে নেয়। শুধু তাই-ই নয়, রাধারাণীর জন্য কাপড় পাঠানোর ব্যবস্থা করে। এমনকি তিনি নিজের ও রাধারাণীর নাম লেখা একটি নোট তাদের ঘরে রেখে যায়। রাধারাণীরা উপকারীর উপকারের চিহ্ন হিসেবে সেই নোটটি রেখে দেয়, খরচ করেনা। তারা দরিদ্র হলেও নির্লোভ – তাই এমনটি করতে পেরেছিল।
৩. “রাধারাণী নামে এক বালিকা মাহেশে রথ দেখিতে গিয়াছিল।” — রাধারাণী রথ দেখতে গিয়েছিল কেন ? সেখানে তার যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল তার বর্ণনা দাও।
উঃ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের রাধারাণী গল্প -এর কেন্দ্রীয় চরিত্র বালিকা রাধারাণী। তাদের পূর্বাবস্থা স্বচ্ছল হলেও একটি মোকদ্দমায় বিপুল সম্পত্তি হারিয়ে রাধারাণীর মা অসহায় ও দরিদ্র হয়ে পড়ে। শারীরিক পরিশ্রম করে তার মা পেটের ভাত জোগাড় করতেন। কিন্তু হঠাৎ তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় এবং রথের দিন সেই অসুখ বেড়ে গেলে পথ্যের প্রয়োজন হয়। এই পথ্য কেনার অর্থ জোগাড়ের জন্য রাধারাণী বন থেকে ফুল তুলে একটি মালা গাঁথে। সেই মালাটি বিক্রি করে মায়ের পথ্য কিনতে অর্থ জোগাড়ের জন্যই রাধারাণী মাহেশে রথের মেলায় যায়।
কিন্তু ‘রথের টান’ অর্ধেক হওয়ার সাথে সাথে বৃষ্টি নামে এবং লোকের ভিড় কমে যায়। মেলা অসময়ে ভেঙে যাওয়ায় রাধারাণীর মালা বিক্রি হয় না। ভগ্নহৃদয়ে রাধারাণী যখন কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরছে তখনই অন্ধকার পথে তার ঘাড়ের উপরে একটি লোক এসে পড়ে। লোকটি রাধারাণীর কান্নার কারণ জানতে চায়। সব শোনার পরে অজ্ঞাত ব্যক্তিটি রাধারাণীর হাত ধরে সেই অন্ধকার পিছল পথে তাকে বাড়ি পৌঁছোতে সাহায্য করে এবং তার রথের মেলায় যাওয়ার কারণ জেনে মালাটি কিনেও নেয়।

