শিক্ষাবিস্তারে গণমাধ্যমের ভূমিকা
আজকের প্রবন্ধ শিক্ষাবিস্তারে গণমাধ্যমের ভূমিকা বা অবদান। আমরা এর আগে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ তুলে ধরেছি। আজকের প্রবন্ধটিও মাধ্যমিক পরীক্ষা সহ বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য বিশেষ সহায়ক হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আমাদের সমস্ত প্রবন্ধের লিংক নীচে দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে আছে প্রশ্নোত্তরের লিংকও। আগ্রহী ছাত্রছাত্রী তা দেখে নিতে পারো।
শিক্ষাবিস্তারে গণমাধ্যমের ভূমিকা
আলোচ্য প্রবন্ধটি নিম্নোক্ত পয়েন্টে লেখা হল। এই পয়েন্টের ভিত্তিতে অনুরূপ প্রবন্ধও লেখা যেতে পারে।
ভূমিকা
কেবল শিক্ষাক্ষেত্রে নয়, বর্তমান আধুনিক সভ্যতা নানাভাবে গণমাধ্যম বা মিডিয়া দ্বারা প্রভাবিত। মিডিয়ার পুণ্য কল্যাণে বিশ্ব আজ মানুষের হাতের মুঠোয়। সংবাদপত্র, বেতার, দূরদর্শন, ইন্টারনেট ও সোস্যাল মিডিয়া প্রভৃতির মাধ্যমে বিশ্বের যে কোনো স্থানের যে কোনো ঘটনা বিষয়ে শিক্ষালাভ সহজ ও সুগম হয়েছে। গণমাধ্যম দূরকে করেছে নিকট, অজানাকে সহজেই জানতে সাহায্য করেছে, করছেও। আর আমাদের মতো উন্নতশীল দেশে গণমাধ্যমগুলির ভূমিকা সর্বজনবিদিত। শিক্ষাবিস্তারে গণমাধ্যমগুলি বিশেষ সহায়ক। তবে এই সমস্ত মিডিয়ার নেতিবাচক দিকও রয়েছে। তার ফলে জনজীবনে তার প্রভাব পড়ছে। কিন্তু নেতিবাচকতাকে সরিয়ে রাখলে শিক্ষাবিস্তারে গণমাধ্যম কী গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে তা বলাই বাহুল্য।
গণমাধ্যম কী ?
যে সমস্ত মাধ্যমের দ্বারা মানুষ বিভিন্ন বিষয়ে সংবাদ পায় তাকে গণমাধ্যম বলা যেতে পারে। সেই প্রাচীনকাল থেকেই লোকশিক্ষার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়ে আসছে বিভিন্ন মাধ্যম। যেমন পাঁচালী, কবিগান, মঙ্গলগান, ছড়া, কীর্তন, ব্রতকথা, লোকগাথা, পুতুলনাচ ইত্যাদি। কিন্তু ক্রমে বিজ্ঞান ও সভ্যতার উন্নতিতে একে একে সংবাদপত্র, বেতার, দূরদর্শন, চলচ্চিত্র, ইন্টারনেট প্রভৃতি মাধ্যমের প্রচলন হয়। আধুনিক যুগে ইন্টারনেট একটি শক্তিমান মাধ্যম।
গণমাধ্যমের কার্যকারিতা
শিক্ষাবিস্তারে গণমাধ্যমগুলির ভূমিকা অনস্বীকার্য। কেননা, আজকের উন্নত বিশ্বে গণমাধ্যমগুলির ভূমিকা সক্রিয়। একঘেয়েমি দূর করে মানুষকে আনন্দ দিতে যেমন গণমাধ্যমগুলি উপযোগী, তেমনি তা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শিক্ষাবিস্তারেও সহায়ক হয়ে ওঠে। সংবাদপত্র, বেতার বা রেডিও, টেলিভিশন ইত্যাদি আজকের মানুষের কাছে অন্যতম উপাদান। এগুলি মানুষের শিক্ষা ও সচেতনতা বিস্তারে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে।
সংবাদপত্র
গণমাধ্যম হিসেবে সংবাদপত্রের গুরুত্ব আজ সর্বজন স্বীকৃত। শুধু শহর নয়, গ্রামাঞ্চলেও সংবাদপত্র পাঠের জন্য মানুষ উদগ্রীব হয়ে থাকে। দেশ বিদেশে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা, রাজনীতি, খেলা, এমনকি বিজ্ঞাপন পর্যন্ত প্রভৃতি যাবতীয় খবর পাওয়া যায় সংবাদপত্রে। সেই সব নানান খবরের আলোকে সাধারণ মানুষের চেতনার বিস্তার ঘটে। মানুষ নানা শিক্ষা লাভ করে। তাই সংবাদপত্র শুধু শিক্ষাবিস্তারে নয় তথা আধুনিক জীবনের অপরিহার্য উপাদান। কিন্তু বর্তমানে ছাপা সংবাদপত্রের ব্যাপক ব্যবহার কমে এসেছে। পরিবর্তে মানুষ পছন্দ করছে ই-পেপার।
বেতার
জনজীবনে বেতারের ভূমিকাও অনেকখানি। বেতারের মাধ্যমে যেমন বিভিন্ন খবর মানুষ পায়, তেমনি মনোরঞ্জনের নানা উপাদানও খুঁজে পায়। বিশেষ করে বেতারে প্রচারিত নানা অনুষ্ঠান প্রতিনিয়ত মানুষকে সমৃদ্ধ করে চলে। শিক্ষার্থী থেকে সাধারণ গৃহস্থ সকলের সহায়ক এই বেতার। বেতারে সম্প্রচারিত কৃষিকথার আসর থেকে একজন কৃষক তার জীবিকার উন্নতির নানা পরামর্শ যেমন পেতে পারে তেমনি বিভিন্ন স্বাস্থ্য সচেতনার বার্তাও পাওয়া যায়। যদিও বর্তমান মোবাইলের যুগে বেতারের ব্যবহার কমে এসেছে তবু সাধারণ গ্রামীণ জীবনের উন্নয়নের ক্ষেত্রে কিংবা সমাজ সচেতনতা বৃদ্ধিতে ও শিক্ষার বিস্তারে বেতার অন্যতম এক মাধ্যম তা স্বীকার করতেই হয়।
দূরদর্শন
শিক্ষা ও চেতনার বিস্তারে বেতারের মতো দূরদর্শনও শক্তিশালী এক গণমাধ্যম। বেতারের ব্যবহার কমে এলেও এখনও শিশু থেকে বৃদ্ধ, কৃষিজীবী থেকে বুদ্ধিজীবী, শহরবাসী থেকে গ্রামবাসী প্রায় সকলেই দূরদর্শনের ভক্ত। দূরদর্শনে প্রচারিত নানা অনুষ্ঠান, সংবাদ, শিক্ষামূলক পরিবেশনা যেমন ক্যুইজ, সাধারণ জ্ঞানের অনুষ্ঠান, পরীক্ষা স্পেশ্যাল, জানা-অজানা – এসব থেকে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হতে পারে। আজকের ছাত্রসমাজ যে ব্যাপকভাবে দূরদর্শনের দ্বারা প্রভাবিত, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।
চলচ্চিত্র
লোকশিক্ষা ও মনোরঞ্জনে চলচ্চিত্রের অবদান অপরিসীম। কাহিনি চিত্র, তথ্যচিত্র প্রভৃতি থেকে মানুষের জ্ঞান ও চেতনার প্রসার ঘটে। অবসর যাপনে, চরিত্র গঠনে, নীতিশিক্ষার প্রসারে, সাংস্কৃতিক বোধের প্রসারে চলচ্চিত্র আধনিক জীবনের অন্যতম গণমাধ্যম।
সোস্যাল মিডিয়া
বর্তমান যুগে মানুষ যার দ্বারা সর্বাধিক প্রভাবিত তা হল সোস্যাল মিডিয়া। ফেসবুক, টুইটার বা ইউটিউব সহ নানা সোস্যাল মিডিয়া মানুষকে আজ প্রায় গ্রাস করেছে। কোনো ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে সোস্যাল মিডিয়ায় মানুষ তা জানতে পারছে। এখানে নানা শিক্ষামূলক তথ্য, ভিডিও পরিবেশিত হচ্ছে। ফলে বর্তমান যুগে শিক্ষা বিস্তারে সোস্যাল মিডিয়া একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অবলম্বন করে চলেছে।
গণমাধ্যমের কুফল
কোনো কোনো ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের কুপ্রভাব রয়েছে। বিশেষ করে ছাত্রজীবনে দূরদর্শন ও সোস্যাল মিডিয়ার কুফল পড়ছে। টিভিতে বিভিন্ন সিরিয়াল দেখার পাশাপাশি হত্যার দৃশ্য বাস্তব জীবনে কু প্রভাব ফেলছে। সংবাদপত্রেও রাজনীতির হিংসা-বিদ্বেষে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। বিভিন্ন মাধ্যমে কুরুচিকর বিজ্ঞাপন শিক্ষায় কুফল ডেকে আনছে। ছাত্রছাত্রীরা অধিক মাত্রায় সোস্যাল মিডিয়ার ব্যবহার করে নিজেদের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
উপসংহার
তবে সব কিছুরই ভালো-মন্দ উভয় দিক থাকে। মন্দের কথা ভেবে আমাদের পিছিয়ে গেলে হবে না, গণমাধ্যমগুলিকে শিক্ষা ও চেতনার বিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা নিতেই হবে। শিক্ষাবিস্তারে গণমাধ্যমের ইতিবাচক দিকগুলিকে মেলে ধরতে পারলে তার প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী।
অন্যান্য প্রবন্ধ
বাংলার উৎসব
পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার
বিজ্ঞান ও কুসংস্কার

