বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান – বিষয়বস্তু ও প্রশ্নোত্তর
দশম শ্রেণির বাংলা বিষয়ে আমাদের আজকের আলোচনা রাজশেখর বসুর লেখা বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান প্রবন্ধটি। আমরা প্রবন্ধের মূল বিষয়বস্তু সহ নানা প্রশ্নোত্তর দেখে নেব। মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের এই প্রশ্নোত্তরগুলি অনেকখানি কাজে লাগবে তা বলাই বাহুল্য।
বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান – বিষয়বস্তু
বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান বিষয়ক পাঠকবর্গকে লেখক দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত করে তাঁর বৈজ্ঞানিক আলোচনাকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। প্রাবন্ধিকের কথায় বিজ্ঞান লেখকগন তাদের রচনারীতির নৈপুণ্য প্রদর্শন করতে গিয়ে বিষয় থেকে লক্ষ যোজন দূরে সরে যান ফলে রচনার সঠিক রসাস্বাদনে ব্যাঘাত ঘটে। রচনাটি হয়ে যায় উদ্ভট গোছের। সঠিক পরিভাষার অব্যবহারে কিংবা তার অপপ্রয়োগে বিজ্ঞান তার স্বধর্ম হারিয়ে ফেলে।
তাই বিজ্ঞানের সঠিক পরিভাষার সঠিক প্রয়োগ জরুরি। বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখির ক্ষেত্রে সঠিক পরিভাষার অপ্রতুলতা একটি অন্যতম বাধা বলে লেখক মনে করেন। সেক্ষেত্রে যতদিন না বিকল্প পরিভাষা পাওয়া যায় ততদিন ইংরেজি শব্দ বাংলা বানানে ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। সর্বোপরি বিজ্ঞান বিষয়ক রচনায় কোন ভুল তথ্য বা উদ্ধৃতি যাতে না থাকে সে দিকে দৃষ্টি দেওয়া দরকার বলে লেখক মনে করেন।
এককথায় উত্তর
১. ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ রাজশেখর বসুর কোন গ্রন্থের প্রবন্ধ ?
উঃ বিচিন্তা
২. রাজশেখর বসুর ছদ্মনাম কী ?
উঃ পরশুরাম
৩. রাজশেখর বসু কোন বছর ‘চলন্তিকা’ অভিধান রচনা করেন ?
উঃ ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দ
৪. বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ যাদের জন্য লেখা হয় তাদের কয়টি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় ?
উঃ দুটি শ্রেণিতে
৫. বিজ্ঞানের সঙ্গে পূর্ব পরিচয় নেই কোন শ্রেণির পাঠকের ?
উঃ প্রথম শ্রেণির
৬. রচনায় উল্লেখিত ‘ক্রোটন’ আসলে কী ?
উঃ একটি গাছ
৭. লেখকের ভাষায় নিম্নোক্ত কোনটি উবে যায় ?
উঃ জল ও কর্পূর
৮. কোন শ্রেণির পাঠক ইংরেজি ভাষার প্রভাব থেকে মুক্ত ?
উঃ প্রথম শ্রেণির পাঠক
৯. লেখককে ছেলেবেলায় কার বাংলা জ্যামিতি পড়তে হয়েছিল ?
উঃ ব্রহ্মমোহন মল্লিক
১০. কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কোন বছর পরিভাষা সমিতি নিযুক্ত করেছিল ?
উঃ ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে
১১. ‘অনেক লেখক এখনও আয়ত্ত করতে পারেননি’ – কীসের কথা বলা হয়েছে ?
উঃ বিজ্ঞানের আলোচনার রচনাপদ্ধতি
১২. ‘শব্দের ত্রিবিধ’ কথা কারা বলেছেন ?
উঃ আলংকারিকেরা
১৩. ‘শব্দের ত্রিবিধ’ – এর প্রথমটি কী ?
উঃ অভিধা
১৪. ‘শব্দের ত্রিবিধ’ – এর দ্বিতীয়টি কী ?
উঃ লক্ষণা
১৫. ‘শব্দের ত্রিবিধ’ – এর তৃতীয়টি কী ?
উঃ ব্যঞ্জনা
১৬. রচনায় উল্লেখিত একটি প্রবাদ হল –
উঃ অরণ্যে রোদন
১৭. ‘অরণ্যে রোদন’ প্রবাদটির অর্থ কী ?
উঃ নিষ্ফল খেদ
১৮. ‘শব্দের ত্রিবিধ’ অনুসারে ‘অরণ্যে রোদন’ একটি –
উঃ ব্যঞ্জনা
১৯. ‘হিমালয় যেন পৃথিবীর মানদণ্ড’ – উক্তিটি কার ?
উঃ কালিদাসের
২০. একটি পত্রিকায় কোন গ্যাসকে ‘স্বাস্থ্যকর’ বলা হয়েছে ?
উঃ ওজন গ্যাসকে
গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
১. ব্রহ্মমোহন মল্লিক সম্পর্কে কী জানো ?
ব্রহ্মমোহন মল্লিকের আবির্ভাবকাল ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দ। গণিতশাস্ত্রে অসাধারণ পান্ডিত্য ছিল। ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তিনি গণিতের পাঁচটি গ্রন্থ রচনা করেন। ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে স্থাপন করেন একটি মডেল স্কুলও। ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে রণজিৎ সিংহের উপর জীবনীগ্রন্থও লেখেন তিনি।
২. ‘পারিভাষিক শব্দ ‘ বলতে কী বোঝ ?
উঃ ‘পারিভাষিক শব্দ’ বলতে পরিভাষা সম্বন্ধীয় বোঝায়। পরিভাষা এক ধরনের সংজ্ঞাবিশেষ যার কোনো প্রকার অর্থান্তর ঘটে না। ইংরেজিতে এগুলিকে ‘Technical Term’ বলে।
৩. কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিভাষা সমিতিতে কারা নিযুক্ত ছিলেন ?
উঃ ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিভাষা সমিতিতে নিযুক্ত ছিলেন বিজ্ঞানের বিভিন্ন অধ্যাপক, ভাষাবিদ, সংস্কৃত পণ্ডিত এবং কয়েকজন লেখক।
৪. প্রাবন্ধিক বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে কোন কোন অসুবিধার কথা বলেছেন তা আলোচনা করো।
উঃ বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে সম্ভাব্য বাধা সম্পর্কে প্রাবন্ধিক রাজশেখর বসু আলোচনা করেছেন তাঁর বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান প্রবন্ধে। সেই সমস্ত বাধাগুলি হল –
(১) যারা ইংরেজি জানেন এবং ইংরেজিতে বিজ্ঞান পাঠ করেছেন এমন পাঠকের বাংলায় বিজ্ঞানচর্চা করা বেশ কঠিন।
(২) বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ ও কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচেষ্টার পরেও উপযুক্ত পারিভাষিক শব্দের অভাব।
(৩) পাশ্চাত্ত্য দেশগুলির তুলনায় এদেশের সাধারণ মানুষের বিজ্ঞান চেতনা অনেক কম। তাতে বিজ্ঞানভিত্তিক রচনা সহজে বোধগম্য হয় না।
(৪) অনেক লেখকের ভাষা আড়ষ্ট ও ইংরেজির আক্ষরিক অনুবাদ দোষে দুষ্ট, যা বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে অন্তরায়।
(৫) কিছু লেখক পারিভাষিক শব্দ বাদ দিয়ে রচনাকে সহজবোধ্য করতে চাইলেও তা বাস্তব রূপ পায়নি।
(৬) রচনায় উপমা ও রূপক ছাড়া অন্যান্য অলংকার বিজ্ঞানভিত্তিক রচনার গুরুত্বকে হ্রাস করে।
(৭) এছাড়া আছে ভুল তথ্য পরিবেশন। অনেকে না জেনে কিংবা অল্প জেনে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানধর্মী রচনায় ভুল তথ্য পরিবেশন করে ফেলেন।
প্রাবন্ধিকের মতে, উল্লেখিত বাধাগুলি কাটিয়ে উঠতে না পারলে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চা ত্রুটিহীন হওয়া সম্ভব নয়।
৫. কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিভাষা সমিতির কর্মপ্রচেষ্টা সফল হয়েছিল কি ? আলোচনা কর।
উঃ বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চার সমস্যা দূর করতে ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে পরিভাষা রচনার জন্য একটি সমিতি গঠিত হয়েছিল। এই সমিতির সদস্য ছিলেন বিজ্ঞানের বিভিন্ন অধ্যাপক, ভাষাবিদ, সংস্কৃত পণ্ডিত এবং বেশ কিছু লেখক। তাঁদের কর্মপ্রচেষ্টা ইতিপূর্বে গঠিত বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের পরিভাষা সমিতির তুলনায় অনেক সুসংহত ও সফল হয়েছিল। এর কারণ – তাঁরা একযোগে কাজ করেছিলেন। তাঁদের সংকলনে সমতা বজায় ছিল। এই প্রচেষ্টার ফলে পাঠকের পক্ষে দুর্বোধ্য অর্থ সহজবোধ্য হয়েছে। কিন্তু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই সংকলন খুব বড়ো নয়। লেখকের মতে আরও অনেক শব্দের প্রয়োজনীয়তা আছে। তাই প্রাবন্ধিক রাজশেখর বসু পারিভাষিক শব্দ নির্মাণের দিকে অধিক জোর দিয়েছেন।
অন্যান্য আলোচনা
| প্রশ্নোত্তরের বিষয় | LINK |
|---|---|
| জ্ঞানচক্ষু | Click Here |
| অসুখী একজন | Click Here |
| আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি | Click Here |
| আফ্রিকা | Click Here |
| বহুরূপী | Click Here |
| অভিষেক | Click Here |
| সিরাজদৌল্লা | Click Here |
| প্রলয়োল্লাস | Click Here |
| পথের দাবী | Click Here |
| অদল বদল | Click Here |
| সিন্ধুতীরে | Click Here |
| বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান | Click Here |
| অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান | Click Here |
| নদীর বিদ্রোহ | Click Here |
আমাদের ইউটিউব চ্যানেল

