পরিবেশ দূষণ – প্রবন্ধ রচনা
আমাদের আজকের প্রবন্ধ পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার। সকলের জন্যই এই রচনাটি আলোচিত হল। আশা করি সকল স্তরের ছাত্রছাত্রীদের প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম হবে। বাংলার উৎসব রচনার জন্য এখানে ক্লিক কর।
পরিবেশ দূষণ – ভূমিকা
পৃথিবীতে সকলের জন্য পরিবেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিবেশই সমস্ত প্রাণের ধারক। পৃথিবীতে মানুষ বা অন্যান্য উদ্ভিদ বা প্রাণীর জীবনের উদ্ভব ও বিকাশ ঘটে এই পরিবেশের ওপর নির্ভর করে। পরিবেশ থেকেই সকল জীব তার বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় উপকরণ পায়। কিন্তু কোনো কারণে যদি সেই পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়ে তবে তা জীবের অস্তিত্বের জন্য সঙ্কটজনক হয়ে ওঠে।
পরিবেশ ও দূষণ
আমাদের চারপাশের যা কিছু আছে তা নিয়েই আমাদের পরিবেশ। পৃথিবীর এই গাছপালা, মাটি, পাহাড়, বায়ু, জলাভূমি, বাসস্থান সব কিছু নিয়েই আমাদের পরিবেশ। জগতের সকল জীবনের অন্যতম প্রধান সহায় এই পরিবেশ।
পরিবেশ যখন তার স্বাভাবিকতা হারিয়ে তার নানা উপাদানের কাঙ্খিত মাত্রার হেরফের হয়, তখন সেই পরিবেশ জীব-জগতের জন্য হানিকর হয়ে উঠে। এক অস্বাভাবিক, অসুস্থ পরিবেশ তৈরি হয় যা হলো দূষিত পরিবেশ। আধুনিক যুগে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্রমোন্নতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে পরিবেশ দূষণের মাত্রা। ফলে নানা দুর্যোগ বিপর্যয় নেমে আসছে এই পৃথিবীর উপর। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জীবন।
দূষণের কারণ ও শ্রেণি
পরিবেশ দূষণের কারণ ভিন্ন স্থানে বা কালে ভিন্ন ভিন্ন। তবে সাধারণত পরিবেশ দূষণে দায়ী প্রধান কারণ হলো – জনসংখ্যা বৃদ্ধি, রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যাপক ব্যবহার, নির্বিচারে বন কাটা, ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার, গ্রিন হাউস এফেক্ট, কলকারখানার ব্যাপক প্রচলন, প্লাস্টিকের অধিক ব্যবহার ইত্যাদি। পরিবেশের সকল দূষণকে প্রধানত চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। সেগুলি হলো – বায়ু দূষণ, জল দূষণ, মাটি দূষণ ও শব্দ দূষণ।
বায়ু দূষণ
বর্তমানে বায়ুদূষণ সারা বিশ্বের একটি সমস্যা। বায়ুদূষণে মূলত দায়ী বাতাসে ভাসমান বিভিন্ন হাল্কা বস্তু। বিভিন্ন কলকারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া, পরিত্যক্ত আবর্জনায় থাকে নানা ধরনের অক্সাইড, গ্যাস। এগুলি বাতাসের সাথে মিশে সালফার ও নাইট্রোজেনের অম্ল বা অ্যাসিড তৈরি করে। ঊর্ধ আকাশে বাতাসের সাথে এদের মিশ্রন ঘটে। তারপর তা অ্যাসিড রূপে ভূপৃষ্ঠে পতিত হয় যাকে অ্যাসিড বৃষ্টি বলে। এর ফলে জনজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
জল দূষণ
জল দূষণের ভয়াবহতা দেশের বিভিন্ন নদী তীরবর্তী মানুষদের জীবনকে অতিষ্ট করে তুলেছে। এই চিত্র কেবল ভারতেই নয়, সারাবিশ্বে জনবহুল এলাকার সাধারণ সমস্যা। নদী, পুকুর বা বিভিন্ন জলাশয়ে ময়লা আবর্জনা ফেলার কারণে তার জল শীঘ্রই দূষিত হয়। তাছাড়া আছে চাষের কাজে ব্যবহৃত রাসায়নিক, কলকারখানার বর্জ্য পদার্থও যা নানাভাবে জলকে দূষিত করে। তার ফলে নানা রকম সমস্যায় পড়ছে জীবন। উন্নত দেশগুলোতে জল শোধনের ব্যবস্থা থাকলেও অনুন্নত দেশগুলি এখনও এই সমস্যায় আক্রান্ত।
মাটি দূষণ
মাটি দূষণ বর্তমানে আমাদের দেশের অন্যতম একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে খাদ্যের চাহিদাও বাড়ছে। ফসলের অধিক উৎপাদনে ক্ষেতে অধিক পরিমাণে ব্যবহৃত হচ্ছে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক। তা মাটির উর্বরা শক্তিকে দুর্বল করে দিচ্ছে। তাছাড়া প্লাস্টিক ও পলিথিন জাতীয় দ্রব্যের অপপ্রয়োগে মৃত্তিকা দূষণ ত্বরাণ্বিত হচ্ছে।
শব্দ দূষণ
আধুনিক জীবনে শব্দ দূষণ আর এক বড় সমস্যা। কলকারখানা ও যানবাহনের শব্দের সঙ্গে নানা অনুষ্ঠানে মাইকের বিরক্তিকর আওয়াজ, বাজি-পটকার আকস্মিক শব্দ এই প্রকার দূষণের কারণ। এর ফলে শ্রবণযন্ত্রের সমস্যা, হৃদপিণ্ডের নানা রোগ, স্নায়ুতন্ত্রের জটিলতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। শব্দ দূষণে শিশু ও বয়স্করা অধিক আক্রান্ত হয়।
প্রতিকার
পরিবেশ দূষণের পরিণতি মারাত্মক। মানুষ ইতিমধ্যে হাতে নাতে এর পরিণাম উপলব্ধি করতে শুরু করেছে। তাই পরিবেশ দূষণের প্রতিরোধে সমস্ত বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার যথার্থ উপায় অনুসন্ধান করে তা কার্যকর করতে হবে। পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব কেবল কোনো ব্যক্তিবিশেষের বা সরকার বা কোনো নির্দিষ্ট সংস্থার নয়, এ দায়িত্ব সকলের। সকলকে এক্ষেত্রে একযোগে কাজ করতে হবে। সমষ্টিগত প্রয়াসই পরিবেশ রক্ষায় বড় ভূমিকা নিতে পারে। এই বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বনভূমিকে সর্বাগ্রে বাঁচাতে হবে। সেই সঙ্গে নতুন করে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি গ্রহণ করা জরুরি। কলকারখানা থেকে গ্যাস ও বর্জ্য নির্গমনে নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে বা বিকল্প পথ অনুসন্ধান করতে হবে।
উপসংহার
আমাদের সকলের জন্য পরিবেশ দূষণ এখন একটি মারাত্মক সমস্যা। তাই সকলের এ বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত। একটি সুস্থ, সুন্দর, দূষণমুক্ত ও বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তোলার জন্য আমাদের অঙ্গীকারবদ্ধ হতেই হবে। পরিবেশ দূষিত না করার প্রতিজ্ঞা নিয়ে পরিবেশ রক্ষায় আমাদের সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে।

