সাহিত্য সঞ্চয়ন (IX)

নিরুদ্দেশ গল্প – বিষয়বস্তু ও প্রশ্নোত্তর

নবম শ্রেণির বাংলা বিষয়ে একটি বিশেষ পাঠ্য নিরুদ্দেশ গল্পটি। আমরা এই গল্প থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর যেমন দেখে নেব, তেমনি গল্পের মূল বিষয়টিও জেনে নেব। পাশাপাশি প্রাসঙ্গিক তথ্যেও নজর দেব। আশা করি আলোচনাটি ছাত্রছাত্রীদের সহায়ক হবে।

নিরুদ্দেশ গল্প – প্রাসঙ্গিক তথ্য

উৎস – সামনে চড়াই (১৯৪৭), স্বনির্বাচিত গল্প (এই গ্রন্থের চতুর্থ গল্প)

চরিত্র – শোভন, নায়েবমশাই, গল্পকথক

বিষয়বস্তু

একটি নিরুদ্দেশের ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিরুদ্দেশ গল্পের কাহিনি সজ্জিত হয়েছে। খবরের কাগজে একসঙ্গে অনেকগুলি নিরুদ্দেশের খবর দেখে গল্পকথক আর তার বন্ধু সোমেশের পারস্পরিক সংলাপের পর সোমেশ একটি নিরুদ্দেশের বাস্তব কাহিনি শোনায়। সে কাহিনিতে আছে বিষাদ।

সোমেশ শুনিয়েছে শোভনের নিরুদ্দেশের কাহিনি। শোভন ছিল সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। সে নিরুদ্দেশ হলে দীর্ঘদিন ধরেই সংবাদপত্রে তার নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপণ প্রচারিত হয়। সোমেশের কথায় ঐ বিজ্ঞাপনগুলি পরপর পড়লে যেন একটি করুণ ইতিহাস মনে হয়। সংবাদপত্রে প্রদত্ত বিজ্ঞাপণে কাতর অনুরোধ ক্রমশ হতাশ হাহাকারে পরিণত হয়। এভাবে দু’বছর অতিক্রান্ত হয়। একদিন শোভন হঠাৎ বাড়ি ফিরে আসে। কিন্তু তাকে কেউ চিনতেই পারে না। শুধু তাই নয়, সকলেই শোভনের অস্তিত্বই অস্বীকার করে। কেননা তারা জেনেছে কয়েকদিন আগেই গাড়ি চাপা পড়ে মারা গেছে শোভন। একথা শোনার পর শোভন স্তব্ধ হয়ে যায়, কিছু বলার ভাষা হারিয়ে যায় তার। উলটে নায়েবমশাই শোভনকে কিছু টাকা দিয়ে বলে তার মুমুর্ষু মায়ের কাছে শোভনের অভিনয় করে স্বান্তনা দিতে। এর থেকে বড় ট্র্যাজেডি আর কিছু ছিল না শোভনের কাছে।

গল্পের শেষে জানা যায়, সোমেশের পক্ষে এই গল্প বানানো সহজ হয়েছে কারণ শোভনের মতো তারও কানের কাছে একটি জড়ুল আছে।

এককথায় প্রশ্নোত্তর

১. নিরুদ্দেশ গল্পটি কার লেখা ?
উঃ প্রেমেন্দ্র মিত্র

২. ‘বাদলার মত এত অস্বস্তিকর আর কিছু নেই’ – গল্পে উল্লেখিত কালটি হল –
উঃ শীতকাল

৩. খবরের কাগজের বিজ্ঞাপণগুলির বিষয় কী ছিল ?
উঃ নিরুদ্দেশ

৪. ‘আমরা কি এতদিন রামযাত্রা বার করেছি ?’ কার উক্তি ?
উঃ খবরের কাগজের লোকটির

৫. খবরের কাগজে নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপণ বেরিয়েছিল কতগুলি ?
উঃ সাত সাতটা

৬. ‘অমন ছেলে যাওয়াই ভালো’ – ছেলের সম্পর্কে কোন বিশেষণ আলোচ্য গল্পে পাওয়া যায় ?
উঃ অভিমানী

৭. ‘এই বিজ্ঞাপণের পেছনে সত্যকার ট্রাজেডি আছে’ – বক্তা কে ?
উঃ সোমেশ

৮. শোভন নিরুদ্দেশ ছিল কতদিন ?
উঃ দুই বছর

৯. শোভন বাড়িতে ঢুকতে চাইলে তাকে বাধা দেয় কে ?
উঃ নায়েবমশাই

১০. ‘ওঃ ইনি আজই এসেছেন বুঝি!’ বক্তা কে ?
উঃ খাজাঞ্চিবাবু

১১. ‘চেনেন একে ?’  কাকে চেনার কথা জিজ্ঞাসা করা হয়েছে ?
উঃ একটি ছবিকে

১২. শোভন মারা গিয়েছে এই কথা কে বলেছিল ?
উঃ নায়েবমশাই

১৩. শোভন কীভাবে মারা গিয়েছিল বলে জানানো হয়েছে ?
উঃ গাড়ি চাপা পড়ে

১৪. শোভন মারা গিয়েছিল কতদিন আগে ?
উঃ সাতদিন আগে

১৫. ‘সেই সেবারের মত – এই নিয়ে. . .’ কতবার হল ?
উঃ তিনবার

১৬. ‘ছেলের মৃত্যু সংবাদ তিনি শোনেননি’ – কার কথা বলা হয়েছে ?
উঃ বাড়ির কর্ত্রীর

১৭. সোমেশের দেহের কোথায় জড়ুল ছিল ?
উঃ কানের কাছে

১৮. ‘এ তো আমারই ফটো’ – বক্তা কে ?
উঃ শোভন

১৯. নিরুদ্দেশ হবার সময় শোভনের বয়স কত ছিল ?
উঃ ষোল সতের

২০. ‘ক্রমশ হাহাকার হয়ে উঠল’ কীসের কথা বলা হয়েছে ?
উঃ বিজ্ঞাপণের

ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর

১. “বিজ্ঞাপনের পেছনে অনেক সত্যকার ট্র্যাজেডি থাকে।” — ব্যাখ্যা কর।

উঃ প্রেমেন্দ্র মিত্রের লেখা নিরুদ্দেশ গল্পে খবরের কাগজে প্রকাশিত নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপনের প্রসঙ্গে গল্পকথক বলেন যে, এই নিরুদ্দিষ্টরা অনেক সময়ই রাগ বা অভিমান বশত বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। তারপর সেই রাগ বা অভিমান প্রশমিত হলে বাড়ি ফিরেও আসে। কিন্তু সোমেশের মতে বিষয়টি এত সহজ নয়। অনেক নিরুদ্দেশের ঘটনার পেছনে থাকে সংসার থেকে চিরকালের মতো হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা। সেই সমস্ত ক্ষেত্রে ফিরে আসা আর সম্ভব হয় না। এখানেই ঘটে ট্র্যাজেডি।

২. ‘নিরুদ্দেশ’ গল্প অবলম্বনে শোভন চরিত্রটি আলোচনা কর।

উঃ প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত নিরুদ্দেশ গল্পের প্রধান চরিত্র শোভন। পুরনো এক জমিদার বংশের একমাত্র উত্তরাধিকারী শোভন ছিল ষোলো-সতেরো বছর বয়সের একটি ছেলে – দোহারা তার গড়ন। নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপনে বর্ণনায় বলা হয়েছে যে, তার ডান কানের কাছে একটি জড়ুল আছে।

শোভন বাড়ি ছেড়েছিল সংসারের প্রতি অনাসক্তির কারণে। পৃথিবীতে এক ধরনের মানুষ থাকে যে কোনো কিছুতেই বাঁধা পড়ে না। শোভন ছিল তেমনই এক মানুষ।

দুবছর পরে শোভন বাড়ি ফিরে এলে এক অদ্ভুত পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। বাড়ির পুরনো নায়েবমশাই কিংবা খাজাঞিমশাই কেউই তাকে চিনতে পারেন না। তাকে বাড়ির ভেতর ঢুকতে দেওয়া হয় না। এমনকি, শোভনকে শুনতে হয় তার নিজেরই মৃত্যু সংবাদ। তার বৃদ্ধ বাবাও তাকে চিনতে পারেন না।

তবে সব থেকে ট্র্যাজিক মুহূর্তটি আসে তখন, যখন শোভনের হাতে কিছু টাকা গুঁজে দিয়ে নায়েবমশাই বলেন যে তাকে মায়ের সামনে শোভনের ভূমিকায় অভিনয় করতে হবে। আসল পরিচয়কে অস্বীকার করে তাকে একটা মিথ্যা কাহিনির নায়ক করে তোলা হয়।


অন্যান্য আলোচনা

কলিঙ্গ দেশে ঝড়-বৃষ্টি
ধীবর বৃত্তান্ত
ইলিয়াস
নব নব সৃষ্টি
হিমালয় দর্শন
নোঙর
খেয়া
চিঠি
আমরা
রাধারাণী
চন্দ্রনাথ

আমাদের ইউটিউব চ্যানেল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!