সাহিত্য সঞ্চয়ন (IX)

হিমালয় দর্শন – বেগম রোকেয়া

নবম শ্রেণির জন্য পাঠ্য বেগম রোকেয়া রচিত হিমালয় দর্শন ভ্রমণ-বৃত্তান্তমূলক মনোরম একটি রচনা। আমরা এর আগে নব নব সৃষ্টি প্রবন্ধ নিয়ে আলোচনা করেছি। আজকের আলোচনায় নির্বাচিত প্রবন্ধের উৎস, মূল বিষয় সংক্ষেপ ও প্রাসঙ্গিক প্রশ্নোত্তর পরিবেশিত হয়েছে। নবম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা মক টেস্ট দেওয়ার জন্য আমাদের মক টেস্ট বিভাগ ভিজিট কর।

হিমালয় দর্শন – মূল বিষয়

আলোচ্য রচনাটি একটি ভ্রমণ-বৃত্তান্তমূলক রচনা। হিমালয় রেল রোডে শিলিগুড়ি থেকে কার্শিয়াং যাত্রার সময় পার্বত্য অঞ্চলের সৌন্দর্য্য লেখিকার লেখনিতে জীবন্ত হয়ে উঠেছে। সাদা মেঘ, বড় ঘাস, সবুজে ভরা চা-বাগান, জলপ্রপাত, শ্যামল বনভূমি এসবেরই সুন্দর বর্ণনা দিয়েছেন বেগম রোকেয়া।

শুধু প্রাকৃতিক অনুষঙ্গ নয়, এসেছে ভুটিয়ানি মেয়েদের কথাও যারা নিজেদের ‘পাহাড়নি’ বলে পরিচয় দেয়। তাদের সাহস, কর্মপ্রিয় মানসিকতা, পরিশ্রম ও সত্যবাদিতার কথা বলেছেন লেখিকা।

হিমালয়ের অপরূপ রূপ বারবার আস্বাদন করেও যেন তাঁর পিপাসা মেটে না। সবকিছু দেখে লেখিকার মনে জেগেছে ঈশ্বরের অপরূপ সৃষ্টির কথা। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস হয় কেবল ঈশ্বরই প্রশংসার যোগ্য।

উৎস

মূল প্রবন্ধ – ‘কূপমন্ডুকের হিমালয় দর্শন’ প্রবন্ধ

প্রশ্নোত্তর – এককথায় উত্তর

১. হিমালয় রেল রোড আরম্ভ হয়েছে কোথা থেকে ?
উঃ শিলিগুড়ি থেকে

২. ‘আর গাড়িগুলি খুব নীচু’ – কোন গাড়িগুলির কথা বলা হয়েছে ?
উঃ হিমালয়ান রেলগাড়ি

৩. ‘এখনও শীত বোধ হয় না’ – কত ফুট উচ্চতায় লেখিকার এই অনুভূতি ?
উঃ তিন হাজার ফিট

৪. চা ক্ষেত্রগুলির রঙ কেমন ?
উঃ হরিৎ

৫. ‘একথা সহজে বিশ্বাস হয় কি ?’ – কোন প্রসঙ্গে এই কথা বলা হয়েছে ?
উঃ জাহ্নবীর উৎস প্রসঙ্গে

৬. ‘তবু শীত অনুভব করিনা’ – কোন উচ্চতায় লেখিকার এই অনুভব ?
উঃ চার হাজার ফিট

৭. কার্শিয়াং স্টেশনের উচ্চতা কত ?
উঃ ৪৮৬৪ ফুট

৮. লেখিকার সঙ্গে থাকা ট্রাঙ্কগুলি কোন ঠিকানায় বুক করা হয়েছিল ?
উঃ দার্জিলিং

৯. ‘এখানকার বায়ু পরিষ্কার ও হালকা’ – কোন জায়গা প্রসঙ্গে এই কথাগুলি বলা হয়েছে ?
উঃ কার্শিয়াং

১০. লেখিকা ‘মহিলা’য় কীসের কথা পড়েছিলেন ?
উঃ ঢেঁকী শাকের কথা

১১. লেখিকার দেখা ঢেঁকী তরুগুলির উচ্চতা কত ?
উঃ কুড়ি পঁচিশ ফুট

১২. ভুটিয়ানিরা নিজের পরিচয় দেয় কী বলে ?
উঃ পাহাড়নি

১৩. —– প্রশংসার যোগ্য’। শূন্যস্থান পূরণ কর।
উঃ ঈশ্বরই

১৪. রচনায় উল্লেখিত পত্রিকাটির নাম কী ?
উঃ মহিলা

১৫. লেখিকার কথায় ভুটিয়ানিরা কতটা পরিমাণ কাপড় ঘাঘরার মতো পরে ?
উঃ সাত গজ

১৬. ভুটিয়ানিরা এবরো-খেবরো উঁচু পথ দিয়ে ওঠার সময় পিঠে কী পরিমাণ বোঝা বয়ে নিয়ে যায় ?
উঃ দুই – এক মণ

১৭. ‘এখনও শীতের বৃদ্ধি হয় নাই’ – কতটা উচ্চতায় লেখিকার এই অনুভূতি ?
উঃ ৪৮৬৪ ফিট উচ্চতায়

১৮. লেখিকা যত দেখেন তত তার দর্শন পিপাসা কতখানি বাড়ে ?
উঃ শতগুণ

১৯. ‘আমায় দেখ ! আমায় দেখ !’ – লেখিকার ভাবনায় এই আহ্বান কার ?
উঃ প্রতিটি উচ্চশৃঙ্গের ও প্রতিটি ঝরনার

২০. আলোচ্য রচনায় লেখিকা কোন পাখির উল্লেখ করেছেন ?
উঃ টিয়া

ব্যাখ্যাধর্মী প্রশ্নোত্তর

    উঃ আমাদের পাঠ্য ‘হিমালয় দর্শন’ রচনায় লেখিকা কার্শিয়াং–এর জল ও আবহাওয়ার পরিচয় দিয়েছেন। শহরটি ৪৮৬৪ ফিট উচ্চতায় অবস্থিত। শৈল শহর হলেও এই উচ্চতায় এসেও লেখিকার শীত অনুভব হয়নি। যদিও দহনের জ্বালাও আর ছিল না। কিছুটা বসন্তের মতো আবহাওয়া। শীতের বৃষ্টিও তখন শুরু হয়নি। লেখিকা জানিয়েছেন, কার্শিয়াং-এ পৌঁছাবার পর কেবল একদিন বৃষ্টি হয়েছিল। সেখানকার বায়ু পরিষ্কার ও হালকা এবং স্বাস্থ্যকরও বটে।

    লেখিকার মতে, কার্শিয়াং -এর জল খুব একটা ভালো নয়। পানীয় জল হিসেবে তাঁরা ফিল্টারের জল ব্যবহার করতেন। জল ভালো না হলেও দেখতে খুব পরিষ্কার এবং স্বচ্ছ। ঝরনা ছাড়া অন্য কোথাও থেকে জল পাওয়া যায় না। তাই ঝরনা থেকে জল সংগ্রহ করে এনে তা ব্যবহার করতে হতো।

    উঃ ‘হিমালয় দর্শন’ রচনায় লেখিকার পাহাড় দেখার সাধ মেটে নাই।

    আসলে লেখিকা এর আগে সমুদ্র দেখলেও পাহাড় দেখেননি। তাই পাহাড় দেখার বড় সাধ ছিল তাঁর। কার্শিয়াং এসে সেই ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। কিন্তু তাতেও লেখিকার তৃপ্তি ফুরয় না। আসলে পাহাড়ের সৌন্দর্য, ঝরনার মুগ্ধকর রূপ তাকে মোহিত করেছে। তিনি যত দেখেছেন তত তার দেখার ইচ্ছা শতগুণ বেড়ে গেছে। তাঁর কেবল মনে হয়েছে যদি দুটি চোখের বদলে আরো অনেক চোখ তাঁর থাকত তবে পাহাড়কে প্রাণভরে দেখার সাধ মিটত। লেখিকা এই অতৃপ্তি থেকেই বলেছেন ‘সাধ তো মিটে নাই’।

    উঃ লেখিকা বেগম রোকেয়া পাহাড়ের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছেন। শিলিগুড়ি রেল স্টেশন থেকে কার্শিয়াং পর্যন্ত হিমালয়ান রেলগাড়িতে তাদের ভ্রমণবৃত্তান্ত বর্ণনা করেছেন লেখিকা। তিনি লিখেছেন, ‘পথের দুই ধারে মনোরম দৃশ্য — কোথাও অতি উচ্চ চূড়া, কোথাও নিবিড় অরণ্য’ । লেখিকার চোখে ‘তরু, লতা, ঘাস, পাতা, সকলই মনোহর। নিবিড় শ্যামল বন যেন ধরিত্রীর কেশপাশ, আর তার মাঝ দিয়ে পায়ে হাঁটা পথ যেন আঁকাবাঁকা সিঁথি।’

    কার্শিয়াং-এ থাকার এ সময় প্রকৃতির সঙ্গে লেখিকার সরাসরি পরিচয় হয়। বাতাস আর মেঘের লুকোচুরি খেলা চলে – তা দেখতে চমৎকার লাগে। অস্তাচলগামী সূর্য বাতাস আর মেঘ নিয়ে অতি মনোহর সৌন্দর্যের রাজ্য গড়ে তোলে। পশ্চিম আকাশের গায়ে পাহাড়ে যেন তরল সোনা ঢেলে দেয়। আর মেঘেদের গায়ে সেই সোনা রং মেখে থাকে।

    যাত্রাপথে ২০/২৫ ফুট উঁচু ঢেঁকি গাছ দেখে লেখিকার খুব আনন্দ হয়। কার্শিয়াং-এর কোনো কোনো জায়গায় খুব ঘন বন দেখা যায়। লেখিকা পাহাড়, ঝরনা, প্রকৃতির শ্যামল রূপে বিভোর হয়ে পড়েন। তাঁর মনে পড়ে স্রষ্টার কথা। তাঁর মনে হয় যে মহাশিল্পী এত চমৎকার মহাচিত্র অঙ্কন করতে পারেন তার নৈপুণ্য কল্পনারও অতীত।

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    error: Content is protected !!