অদল বদল – পান্নালাল প্যাটেল
আজ আমরা দেখে নেব পান্নালাল প্যাটেল রচিত অদল বদল গল্পটি সম্পর্কে। দশম শ্রেণীর জন্য পাঠ্য এই রচনা থেকে আমরা প্রাসঙ্গিক তথ্য তথ্য সহ নানা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করব। এর আগে আমরা পথের দাবী রচনার তথ্য দিয়েছি। এছাড়া অন্যান্য রচনার তথ্য সহ মক টেস্ট দেওয়া হয়েছে। এসো, আমাদের আজকের পাঠ্য সম্পর্কে তথ্য ও প্রশ্নোত্তরগুলি জেনে নিই।
অদল বদল – প্রাসঙ্গিক তথ্য
উৎসঃ ‘পান্নালালনি শ্রেষ্ঠ বার্তাও’ গল্প সংগ্রহ ।
মূল রচনাঃ পান্নালাল প্যাটেল
অনুবাদঃ অর্ঘ্যকুসুম দত্তগুপ্ত
National Book Trust (NBT) কর্তৃক প্রকাশিত গ্রন্থ ‘সেরা তেরো’ থেকে এই গল্পটি নেওয়া হয়েছে।
গল্পের চরিত্র – অমৃত, ইসাব, ইসাবের বাবা, অমৃতের মা
বিষয়বস্তু
আলোচ্য গল্পে দুই বন্ধু অমৃত ও ইসাবের পারস্পরিক ভালবাসার পরিচয় পাওয়া যায়। তারা দুজনে দুই ভিন্ন সম্প্রদায়ের সন্তান। কিন্তু তার থেকেও বড় পরিচয় তারা একে অপরের অভিন্ন-হৃদয় বন্ধু। হোলির দিন উভয়ে একই রকম জামা পড়ে। কিন্তু অন্য ছেলেদের সঙ্গে মারামারিতে ইসাবের নতুন জামা ছিঁড়ে গেলে অমৃত তার জামা ইসাবকে পড়তে দেয় যাতে তার বন্ধুটিকে তার বাবার প্রহারের হাত থেকে বাঁচানো যায়। তাদের এই ভালবাসার কথা চাপা থাকে না। গোটা গ্রামেই তা প্রচার পায়। তাদের নাম হয়ে যায় ‘অদল-বদল’।
এই অদল বদল কেবল জামা অদল বদল নয়। এ যেন দুইটি সম্প্রদায়ের পারস্পরিক আন্তরিকতা ও ভালবাসার অদল বদল। আর এই অদল বদলই তো আমাদের দেশের মহান ধর্ম।
প্রশ্নোত্তর পর্ব
১. “বলতে গেলে ছেলে দুটির সবই একরকম, তফাৎ শুধু এই যে…..” – ছেলে দুটি কে কে? তাদের মিল ও অমিল কী ছিল লেখ।
উঃ পান্নালাল প্যাটেল রচিত ছোটগল্প ‘অদল বদল’ থেকে উদ্ধৃতাংশটি গৃহীত। প্রশ্নদ্ধৃত অংশে ছেলে দুটো বলতে অমৃত ও ইসাব নামে দুই বন্ধুর কথা বলা হয়েছে।
গল্পের মূল দুই চরিত্র অমৃত আর ইসাব একই স্কুলে পড়ত। তাদের মুখোমুখি বাড়ি এবং দুজনের বাবাই পেশায় ছিলেন চাষি। উভয়ের জমির পরিমাণও প্রায় এক। দুজনের বাবা-ই দুজনের কাছে অসময়ে ধার নেয়। এই সবই ছিল তাদের মিল। তাদের শুধু এক জায়গাতেই তফাৎ ছিল। অমৃত তার বাবা, মা ও তিনভাই-এর সাথে থাকত। কিন্তু ইসাবের ছিল শুধুই বাবা।
২. “এতেও অমৃত পিছপা হতে রাজি নয়” – অমৃত কেন পিছপা হতে রাজি নয়?
উঃ অমৃত তার বাবা মায়ের কাছে ঠিক ইসাবের কেনা নতুন জামার মত একটা জামা তাকেও কিনে দেওয়ার জন্য বায়না করে। অমৃতের মা তখন তাকে অপ্রস্তুত পরিস্থিতিতে ফেলার জন্য মনে করিয়ে দিয়েছিলেন যে ইসাবকে নতুন জামা দেওয়ার আগে তার বাবা তাকে প্রচন্ড মেরেছিলেন, তবে অমৃতও কি সেরকম মার খেতে রাজি আছে কিনা তা জানতে ছেয়েছিলেন। উক্ত প্রস্তাবেও অমৃত পিছপা হয়নি। সে জানায় ইসাবের মত জামা পেতে সে মার খেতেও রাজি।
৩. “অমৃতের অত জোর দিয়ে বলার কারণ ছিল” – অমৃত কী জোর দিয়ে বলেছিল? জোর দিয়ে বলার কারন কী ছিল?
উঃ উদ্ধৃতাংশে অমৃত জোর দিয়ে কুস্তি না লড়ার কথা বলেছিল।
নতুন জামা পড়ে হোলির দিন বিকেলে যখন অমৃত বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল তখন তার মা তাকে সাবধান করে বলেছিলেন যে অমৃত যেন নতুন জামা ময়লা না করে বা কোথাও না ছেঁড়ে। কারণ নতুন জমা পাওয়ার জন্য বাড়িতে অনেক অশান্তি করেছিল সে। তাই জামা ময়লা হলে বা ছিঁড়ে গেলে মায়ের হাত থেকে সে নিস্তার পাবে না। তাই প্রশ্নদ্ধৃত মন্তব্যটির অবতারণা করা হয়েছে।
ভিডিও টিউটোরিয়াল দেখ
৪. “ইসাবের মেজাজ চড়ে গেল” – কেন ইসাবের মেজাজ চড়ে গিয়েছিল?
উঃ পান্নালাল প্যাটেল রচিত ‘অদল বদল’ গল্পটি থেকে উদ্ধৃতাংশটি গৃহীত। গল্পের মূল চরিত্র ইসাব ও অমৃত হরিহর আত্মা দুই বন্ধু। তাদের প্রায় সব দিক থেকেই মিল ছিল। হোলির দিন বিকেলে দুজনই নতুন জামা পরে বাড়ি থেকে বেড়িয়েছিল। তখনই কালিয়া নামে একটি ছেলে অমৃতকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কুস্তি লড়তে বাধ্য করে এবং তাকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। বন্ধুর প্রতি এইরূপ অন্যায় আচরণ দেখে ইসাবের মেজাজ চড়ে গিয়েছিল।
৫. “অমৃত আর ইসাব রণভূমি ত্যাগ করল’- রনভূমি কাকে বলা হয়েছে? তারা কেন সেই রনভূমি ত্যাগ করল?
উঃ অদল বদল গল্পে কালিয়া নামের ছেলেটি অমৃতকে কুস্তি লড়ার জন্য যে মাঠে নিয়ে গেছিল, সেই মাঠটিকেই এখানে রণভূমি বলা হয়েছে।
কালিয়া অমৃতকে কুস্তি লড়তে গিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিলে ইসাব তা সহ্য করতে পারে না। সে নিজেই নেমে যায় কুস্তি লড়তে। কালিয়াকে সে হারিয়েও দেয়। কিন্তু কালিয়ার বাবা-মা এসে সেখাঙ্কার ছেলেদের মারধোর করতে পারে এই ভয়ে তারা সবাই সেই স্থান থেকে পালিয়ে যায়। এরপর অমৃত আর ইসাবও মাঠ ত্যাগ করে চলে যায়। সেই প্রসঙ্গেই আলোচ্য উক্তিটির অবতারণা।
আরও পড়ো
৬. “কিন্তু আমাকে বাঁচানোর জন্য তো আমার মা আছে”- কার উক্তি? উক্তিটির মধ্যে দিয়ে তার চরিত্রের কোন দিকটি প্রকাশিত হয়েছে?
উঃ পান্নালাল প্যাটেল রচিত ছোটগল্প ‘অদল বদল’ থেকে গৃহীত আলোচ্য উদ্ধৃতাংশটির বক্তা হল দশ বছরের অমৃত।
গল্প সূত্রে জানা যায় দোলের দিন পড়ন্ত বিকেলে মারামারি করে ইসাবের জামার পকেট ছিঁড়ে যায়। ইসাব যাতে বাড়িতে গিয়ে বাবার কাছে মার না খায় তার জন্য অমৃত তার জামা ইসাবের সাথে বদলে নেয়। ইসাব তাকে বলে ছেঁড়া জামা দেখলে সেও তো তার বাড়িতে মার খাবে। এই কথায় উওরে অমৃত জানায় যে বাড়িতে তাকে বাঁচানোর জন্য তার মা আছে, ইসাবের তো মা নেই তাকে কে বাঁচাবে?
এই কথার মধ্যে দিয়ে অমৃতের বন্ধুবৎবস্লতার পরিচয় পাওয়া যায়।
৭. “হঠাৎ অমৃতের মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেল” – কী বুদ্ধি খেলেছিল?
উঃ ‘অদল বদল’ গল্পের প্রধান দুই চরিত্র অমৃত আর ইসাবের মধ্যে খুব ভালো বন্ধুত্ব ছিল।
দোলের দিন বিকেলে তারা প্রায় একইরকম জামা পরে বাইরে বেড়িয়েছিল কিন্তু রাস্তায় অন্য ছেলেদের সঙ্গে মারামাড়ির ফলে ইসাবের জামার পকেট ছিঁড়ে যায়। ইসাবের বাবা ছেঁড়া জামা দেখলে তাকে মারবেন ভেবে ইসাবের ভয় হয়। তখন অমৃতের মাথায় একটা বুদ্ধি আসে। তাদের জামা যেহেতু একইরকম, তাই অমৃত তার জামার সাথে ইসাবের জামা বদলে নিতে চায়। যাতে ইসাবের বাবা ছেঁড়া জামার কথা জানতে না পারে আর ইসাবকেও যাতে মার না খেতে হয়, সেই জন্যেই অমৃত এই বুদ্ধির প্রয়োগ করে।
আরও প্রশ্ন
৮. “উনি দশ বছরের অমৃতকে জড়িয়ে ধরলেন” – উনি কে? কেন তিনি অমৃতকে জড়িয়ে ধরেছিলেন?
উঃ আলোচ্য উক্তিটি পান্নালাল প্যাটেল রচিত ‘অদল বদল’ গল্পটি থেকে নেওয়া হয়েছে। উদ্ধৃতাংশে উনি বলতে বোঝানো হয়েছে ইসাবের বাবাকে।
কুস্তি লড়তে গিয়ে ইসাবের জামার পকেট ছিঁড়ে গেলে ইসাবকে তার বাবার মারের হাত থেকে বাচাঁতে অমৃত তার জামা ইসাবের সাথে বদল করে নেয়। যুক্তিতে অমৃত বলেছিল, তাকে তার বাবার মারের হাত থেকে বাচাঁনোর জন্য তার মা আছে, কিন্তু ইসাবের তো মা নেই, শুধু বাবা আছে। তাদের এই অদল বদলের কাহিনী আড়াল থেকে শুনে এবং অমৃতের উদারতা দেখে ইসাবের বাবা অমৃতকে জড়িয়ে ধরেছিল।
৯. “ও আমাকে শিখিয়েছে খাঁটি জিনিস কাকে বলে” – ও বলতে এখানে কাকে বোঝানো হয়েছে? সে কাকে কী শিখিয়েছে?
উঃ প্রশ্নোদ্ধৃত অঙ্গশে ‘ও’ বলতে অমৃতকে বোঝানো হয়েছে।
অমৃত ও ইসাবের জামা বদলানোর ঘটনাটি ইসাবের বাবা আড়াল থেকে দেখেছিল। অমৃত নিজের ভালো জামাটা ইসাবকে দিয়ে নিজে ইসাবের ছেঁড়া জামাটা নিয়ে বলেছিল যে তাকে তার বাবার মারের হাত থেকে বাচাঁনোর জন্য বাড়িতে মা রয়েছে কিন্তু ইসাবের তো মা নেই তাহলে তাকে তার বাবার মারের হাত থেকে কে বাচাঁবে? অমৃতের এই মানসিকতাকেই ইসাবের বাবা খাঁটি জিনিস বলেছেন। সংসারে মায়ের মূল্য কতখানি, তা অমৃতই ইসাবের বাবাকে শিখিয়েছিল।