চিঠি – নবম শ্রেণির বাংলা
নবম শ্রেণির বাংলা বিষয়ক আলোচনায় আমাদের আজকের বিষয় স্বামী বিবেকানন্দের ‘চিঠি’ রচনাটি। আমরা আলোচ্য রচনার বিষয়বস্তু ও নানা প্রশ্নোত্তর জেনে নেব। আমাদের পূর্ববর্তী আলোচনাগুলি পেতে একেবারে শেষের তালিকা দেখো।
চিঠি – বিষয়বস্তু
আলোচ্য রচনায় স্বামী বিবেকানন্দ চিঠিটি লিখেছেন মিস মার্গারেট নোবেলের উদ্দেশ্যে। স্বামীজির আদর্শ ও কর্মে অনুপ্রাণিত হয়ে মিস নোবেল এদেশে আসতে চান এবং এদেশের মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে চান। তারই পরিপ্রেক্ষিতে স্বামীজি নোবেলকে এই পত্র লেখেন।
চিঠিতে তিনি এদেশের সমসাময়িক পরিবেশ ও পরিস্থিতিকে তুলে ধরেছেন। এদেশে এসে কাজ করতে গিয়ে নোবেলকে যে নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হবে সে বিষয়েও অবগত করেছেন তিনি। প্রসঙ্গত উঠে এসেছে স্বামীজির কয়েকজন শিষ্য ও শিষ্যার কথাও। তাদের চরিত্র বিশ্লেষণ করে সমস্তটা বুঝিয়েও দিয়েছেন তিনি। নোবেলকে এদেশে কাজ করতে গিয়ে যে নানা বাধার সম্মুখীন হতে হবে এবং কারো ভরসায় না থেকে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে ‘সিংহী’র মতই কাজ করতে হবে তা তিনি পরিষ্কার করে দিয়েছেন।
চরিত্র পরিচয়
মিস নোবেলঃ সম্পূর্ণ নাম মিস মার্গারেট নোবেল। স্বামীজির বিশেষ শিষ্যা। ভারতে স্ত্রীশিক্ষা বিস্তারে তিনি অগ্রণী ভূমিকা নেন। কলকাতার বাগবাজারে স্থাপন করেছিলেন বালিকা বিদ্যালয় যা বর্তমানে ‘নিবেদিতা বালিকা বিদ্যালয়’ নামে খ্যাত। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ‘The Master as I saw him’ এবং ‘Web of Indian Life’।
স্টার্ডিঃ স্বামী বিবেকানন্দের একজন ইংরেজ ভক্ত। তিনি ভারতের আলমোড়ায় দীর্ঘদিন তপস্যা করেন। আমেরিকায় বেদান্ত প্রচারে তিনি স্বামীজিকে সাহায্য করেন।
মিস মুলারঃ সম্পূর্ণ নাম মিস হেনরিয়েটা মুলার। বেলুর মঠ স্থাপনের সময় তিনি স্বামীজিকে অর্থ সাহায্য করেছিলেন।
মিসেস সেভিয়ারঃ ক্যাপ্টেন জে.এইচ সেভিয়ারের পত্নী। ইনিও স্বামীজির শিষ্যা। বেদান্ত প্রচারের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। স্বামীজির ইচ্ছা ও অনুপ্রেরণায় ‘মায়াবতী অদ্বৈত আশ্রমে’র প্রতিষ্ঠাতা মিসেস সেভিয়ার। রামকৃষ্ণ সঙ্ঘে তিনি ‘মাদার’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
মিস ম্যাকলাউডঃ সম্পূর্ণ নাম মিস জোসেফাইন ম্যাকলাউড। স্বামীজি তাঁকে ‘জো’ বলে ডাকতেন।
মিসেস বুলঃ সম্পূর্ণ নাম সারা বুল (Sarah Bul)। নরওয়েবাসী ওলি বুলের স্ত্রী। স্বামীজি তাঁকে ‘মা’ বা ‘ধীরমাতা’ বলে সম্বোধন করতেন।
এককথায় প্রশ্নোত্তর
১. স্বামী বিবেকানন্দের ‘চিঠি’ রচনাটিতে কাকে চিঠি লেখা হয়েছিল ?
উঃ মিস নোবেলকে
২. স্বামী বিবেকানন্দের ‘চিঠি’ রচনাটিতে চিঠিটি লেখা হয়েছে কোথা থেকে ?
উঃ আলমোড়া থেকে
৩. স্বামী বিবেকানন্দের ‘চিঠি’ রচনাটিতে চিঠি লেখার তারিখ কী ?
উঃ ২৯ জুলাই ১৮৯৭
৪. লেখক স্টার্ডির একখানি চিঠি পেয়েছিলেন কোন দিন ?
উঃ ২৮ জুলাই
৫. লেখক কার কাছ থেকে মিস নোবেলের কর্ম প্রণালী শুনেছেন ?
উঃ মিস মুলার
৬. ভারতের কোন অঞ্চলে সর্বদাই আগুনের হলকা চলছে ?
উঃ দক্ষিণাঞ্চলে
৭. স্বামিজীর চোখে নারী কেমন ?
উঃ সিংহীর মতো
৮. ‘যারা এদেশিয়দের ঘৃণা করেন না’ – কাদের কথা বলা হয়েছে ?
উঃ সেভিয়ার দম্পতি
৯. কার সম্পর্কে বলা হয়েছে – ‘স্নেহময়ী রমণী’ ?
উঃ মিসেস সেভিয়ার
১০. ‘কল্যাণীয়া মিস’ কাকে বলা হয়েছে ?
উঃ মিস নোবেলকে
১১. ‘কাল তার উত্তর দিয়েছি’ – কাল কত তারিখ ছিল ?
উঃ ২৮ জুলাই
১২. ‘একবার বেরলে আর ভেতরে যায় না’ – কীসের কথা বলা হয়েছে ?
উঃ হাতির দাঁত
১৩. রামকৃষ্ণ সংঘে ‘মাদার’ নামে পরিচিত ছিলেন ?
উঃ মিসেস সেভিয়ার
১৪. স্বামীজি কাকে ‘জো’ বলে ডাকতেন ?
উঃ মিস ম্যাকলাউডকে
১৫. মায়াবতী অদ্বৈত আশ্রম কে প্রতিষ্ঠা করেন ?
উঃ সেভিয়ার দম্পতি
১৬. ‘তিনি আমেরিকায় আমার বিশেষ উপকারী বন্ধু ছিলেন’ – কার কথা বলা হয়েছে ?
উঃ মিসেস বুল
১৭. রুক্ষ মেজাজ ও অস্থিরচিত্ততা কোন চরিত্রটির একটি স্বভাব বৈশিষ্ট্য ?
উঃ মিস মুলার
১৮. কাকে ‘নারীকুলের রত্নবিশেষ’ বলা হয়েছে ?
উঃ মিসেস সেভিয়ার
১৯. ‘The Master as I saw him’ গ্রন্থটির লেখক কে ?
উঃ মিস নোবেল
২০. বেদান্ত প্রচারের কাজে কে স্বামীজিকে সাহায্য করেছিলেন ?
উঃ মিষ্টার ই টি স্টার্ডি
২১. স্বামীজি কাকে ‘ধীরমাতা’ বলে সম্বোধন করতেন ?
উঃ মিসেস বুলকে
ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর
১. “কিন্তু বিঘ্নও আছে বহু।” — কোন্ কোন্ বিঘ্নের কথা বলা হয়েছে ?
উঃ স্বামী বিবেকানন্দ তার ‘চিঠি’ রচনায় মিস নােবলকে লেখা চিঠিতে যেসব বিঘ্নের কথা বলেছেন, তার মধ্যে আছে এদেশের মানুষের দুঃখ, কুসংস্কার, দাসত্বের কথা। এখানে মানুষের দারিদ্র্য এক অন্যতম বাধা। জাতিভেদ ও অস্পৃশ্যতা একে অন্যকে আলাদা করে রেখেছে। ভয় অথবা ঘৃণা, যে কারণেই হােক, তারা শ্বেতাঙ্গদের এড়িয়ে চলে। এদের সঙ্গে নাে মিলতে চাইলে শ্বেতাঙ্গরাও তাকে সন্দেহ করতে পারে। এ ছাড়া এদেশের গ্রীষ্মপ্রধান জলবায়ু এবং শহরের বাইরে সুখ ঐশ্বর্যের অভাবও বাধা হয়ে উঠতে পারে।
২. মরদ কী বাত, হাতি কী দাঁত’ – প্রবাদটি কোন অর্থে কেন ব্যবহার করা হয়েছে ?
উঃ স্বামী বিবেকানন্দ মিস মার্গারেট নোবেলকে লেখা চিঠিতে নিজ চরিত্রের কাঠিন্য বোঝাতে এই প্রবাদটির ব্যবহার করেছেন। প্রবাদটির সাধারণ অর্থ হল হাতির দাঁত একবার তৈরি হলে আর ভেতরে প্রবেশ করে না। ঠিক তেমনি মরদ বা পুরুষ একবার কোনো কথা দিলে তা থেকে আর পিছপা হন না।
স্বামীজি তাঁর চিঠিতে প্রথমেই বলেছেন যে তিনি মিস নোবেলকে সর্বদাই সাহায্য করবেন। কিন্তু ভারতে এসে নানা প্রতিকূলতার সামনে পড়ে মিস নোবেল যদি বিরক্তও হন কিংবা তার কাজে যদি অসফল হন তা স্বত্ত্বেও তিনি তার পাশে থাকবেন ও তাকে আগের মতোই স্নেহ করবেন। কারণ তিনি কথা দিয়েছেন এবং সেই কথায় কোনো নড়চড় হবে না।
৩. চিঠি রচনা অবলম্বনে লেখকের স্বদেশ ভাবনার পরিচয় দাও।
উঃ স্বামী বিবেকানন্দ ছিলেন প্রকৃতপক্ষে একজন স্বদেশ প্রেমী। তিনি আমৃত্যু তাঁর কাজের মাধ্যমে দেশের সামাজিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধনের জন্য চেষ্টা করেছেন। পাঠ্য চিঠিটি স্বামীজি তাঁর শিষ্যা মিস নোবেলকে লিখেছেন এবং এই চিঠির বক্তব্যে স্বদেশ ও দেশবাসীর প্রতি তাঁর মনোভাব স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।
স্বামীজি এদেশের পিছিয়ে পড়া নারী সমাজকে নিয়ে বিশেষভাবে চিন্তিত। তাঁর মতে ভারতের নারী সমাজের উন্নতি সাধনের জন্য একজন সত্যিকারের সিংহীর প্রয়োজন। শিক্ষা, মূল্যবোধ, ঐকান্তিকতা, পবিত্রতা, অসীম ভালোবাসা ও দৃঢ়তা দিয়ে এদেশীয় নারী সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি মিস নোবেলকে আহ্বান জানিয়েছেন।
আবার ভারতের মানুষের দারিদ্র্য, দুঃখ, কুসংস্কার, দাসত্ব, জাতিভেদ ও অস্পৃশ্যতা নিয়েও তিনি চিন্তিত। লিখিত চিঠিতে নোবেলের কাছে তিনি ভারতের গ্লানি প্রকাশ করে তা দূর করার বিষয়ে যে কতটা আগ্রহী তা বোঝা যায়।
আমাদের ইউটিউব চ্যানেল

