সাহিত্য সঞ্চয়ন (X)

পথের দাবী – প্রশ্ন ও উত্তর

দশম শ্রেণীর পাঠ্য পথের দাবী রচনাটি আজ আমাদের আলোচ্য বিষয়। আমরা এর আগে প্রলয়োল্লাস কবিতাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। পথের দাবী – প্রশ্ন ও উত্তর আলোচনায় আমরা এই পাঠ্যাংশের নানা প্রাসঙ্গিক তথ্য ও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর তুলে ধরব। পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীরা আমাদের এই ওয়েবসাইটে মক টেস্ট দিতে পারো। গুগল প্লে স্টোর থেকে আমাদের অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ মাধ্যমিক বাংলা ইনস্টল করতে পারো।

প্রাসঙ্গিক তথ্য

মূল রচনার নাম ‘পথের দাবী’ (উপন্যাস)
কেন্দ্রীয় চরিত্র – গিরীশ মহাপাত্র (সব্যসাচী মল্লিক)
অন্যান্য চরিত্র – নিমাইবাবু, জগদীশ, অপূর্ব

প্রশ্নোত্তর পর্ব

পথের দাবী – প্রশ্ন ও উত্তর -এই আলোচনায় আমরা বেশ কয়েকটি প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করলাম। আশা করি এগুলি ছাত্রছাত্রীদের সহায়ক হবে। আমাদের পরামর্শ, এই প্রশ্নোত্তরের পাশাপাশি আমাদের মক টেস্টগুলি দিলে তোমরা উপকৃত হবে।

১. “বাবাই একদিন এঁর চাকরি করে দিয়েছিলেন”- বক্তা কে? তাঁর বাবা কাকে কী চাকরি করে দিয়েছিলেন?

উত্তরঃ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘পথের দাবী’ রচনাংশে অপূর্ব একথা বলেছিলেন।

অপূর্বর বাবা নিমাইবাবুকে পুলিশের চাকরি করে দিয়েছিলেন। সেই নিমাইবাবুই পলিটিক্যাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিককে ধরার জন্য বর্মায় গিয়েছিলেন। সেখানেই তাকে দেখে অপূর্ব প্রশ্নোক্ত উদ্ধৃতিটি করেছিলেন।

২. “তার কালচারের কথাটা একবার ভেবে দেখুন” – কার উক্তি? এমন বক্তব্যের কারণ কী?

উত্তরঃ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পথের দাবী’ রচনাংশে অপূর্ব একথা বলেছিলেন।

বর্মায় পুলিশ সব্যসাচী মল্লিক সন্দেহে গিরীশ মহাপাত্রকে থানায় আটক করেছিলেন। কিন্তু উচ্চশিক্ষিত ডাক্তার উপাধিধারী রাজশত্রু সব্যসাচী মল্লিকের সঙ্গে বিচিত্র সাজে সজ্জিত গিরীশ মহাপাত্রের কোনো রকম সাদৃশ্য ছিল না। তাই সে প্রশ্নোক্ত কথাগুলি বলেছে।

৩. “সে যে এ নয়, তার আমি জামিন হতে পারি”- উক্তিটি কার? কী দেখে বক্তা এই উক্তি করেছে?

উত্তরঃ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘পথের দাবী’ রচনাংশে অপূর্ব একথা বলেছিলেন।

বাংলাদেশের পুলিশ বর্মায় গিয়ে গিরীশ মহাপাত্রকে সব্যসাচী মল্লিক সন্দেহে আটক করেছিল। কিন্তু চিকিৎসাশাস্ত্র ও বিজ্ঞানে অসাধারণ পান্ডিত্যের অধিকারী বিলেত ফেরত ডাক্তার সব্যসাচী মল্লিকের সাথে গিরীশ মহাপাত্রের কোনো সাদৃশ্যই খুঁজে পাওয়া যায়নি। সেই জন্য অপূর্ব নিশ্চিত ভাবে বলেছিল যে ধৃত গিরীশ সব্যসাচী মল্লিক নয়।

ভিডিও টিউটোরিয়াল দেখো

৪. “কীরূপ সদাশয় ব্যক্তি ইনি”- কার কথা বলা হয়েছে? তার প্রতি এমন উক্তির কারণ কী?

উত্তরঃ অমর কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পথের দাবী’ রচনাংশে গিরীশ মহাপাত্রের সম্পর্কে এমন উক্তি করা হয়েছে।

পুলিশ থানায় গিরীশ মহাপাত্রের বাক্স বিছানা তল্লাশ করে তার পকেট থেকে বিভিন্ন জিনিসের সঙ্গে একটি গাঁজার কলকে পায়। নিমাইবাবু তাকে জিজ্ঞাসা করেন সে গাঁজা খায় কিনা। তার উত্তরে সে জানায়, সে নিজে খায় না ঠিকই কিন্তু যদি কারোর কাজে লাগে এই ভেবে গাঁজার কলকেটি পকেটে রেখেছিল। এরপরই জগদীশ বাবুকে উদ্দেশ্য করে গিরীশ মহাপাত্রের সম্পর্কে নিমাইবাবু এই উক্তি করেছিলেন।

৫.  “কাল তাহার ঘরে চুরি হইয়া গেছে”- কার ঘরে চুরি হয়েছিল? এরপর কী হয়েছিল?

উত্তরঃ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পথের দাবী’ রচনাংশের অন্যতম প্রধান চরিত্র অপূর্বর ঘরে চুরি হয়েছিল।

অপূর্বর অনুপস্থিতিতে তার ঘরে চোর এসেছিল। তবে শুধু টাকা পয়সাই চুরি হয়েছিল। ওপরে যে ক্রিশ্চান মেয়েটি থাকত সে গিয়ে চোর তাড়িয়েছিল এবং নিজের ঘরের তালা অপূর্বর ঘরের দরজায় লাগিয়ে দিয়েছিল। যার ফলে অপূর্বর ঘরে সবকিছু চুরি হয়ে যায়নি।

৬. “বাবুটির স্বাস্থ্য গেছে কিন্তু শখ ষোলোআনাই বজায় আছে”- বাবুটি কে? তার শখ যে আছে তা কীভাবে বোঝা গেল?

উত্তরঃ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পথের দাবী’ রচনাংশে উল্লিখিত বাবুটি হল ছদ্মবেশী গিরীশ মহাপাত্র।

গিরীশ মহাপাত্রের মাথায় বাহারি ছাঁট, চুলে সুগন্ধী লেবুর তেল, পরণে রামধনু রঙের জাপানি সিল্কের পাঞ্জাবি ও বিলিতি মখমল পাড়ের সূক্ষ্ম শাড়ি, পকেটের বাঘ আঁকা রুমাল, পায়ের হাঁটু পর্যন্ত ফিতে দিয়ে বাঁধা সবুজ মোজা ও বার্নিশ করা পাম-শু, হাতে হরিণের শিং-এর হাতল দেওয়া বেলের ছড়ি ইত্যাদি দেখেই তার ‘শখ’-এর পরিচয় পাওয়া যায়।

আরও পড়ো

৭. “বুড়ো মানুষের কথাটা শুনো”- বুড়োমানুষটি কে? তাঁর কোন কথা শোনার জন্য বলা হয়েছে?

উত্তরঃ ‘পথের দাবী’ রচনাংশ থেকে গৃহীত উদ্ধৃতাংশে ‘বুড়ো মানুষ’ বলতে নিমাইবাবু (দারোগা) নিজেকেই বুঝিয়েছেন।

গিরীশ মহাপাত্রের ছদ্মবেশে বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক বর্মায় আসেন। সন্দেহের ভিত্তিতে পুলিশ তাকে আটক করে। তল্লাসিতে তার পকেট থেকে একটা গাঁজার কলকে পাওয়া গেলেও তিনি গাঁজা খাওয়ার কথা অস্বীকার করেন। নিমাইবাবু তাঁর অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে গিরীশের চেহারার মধ্যে গাঁজা সেবনের স্পষ্ট লক্ষণ দেখতে পান। তাই ভগ্ন স্বাস্থ্যের অধিকারী গিরীশের নিমাইবাবু গাঁজা না খাওয়ার পরামর্শ দেন।

৮. “তার লাঞ্ছনা এই কালো চামড়ার নীচে কম জ্বলেনা”- কে কাকে একথা বলেছে? কোন লাঞ্ছনার কথা বলা হয়েছে? 

উত্তরঃ উদ্ধৃত লাঞ্ছনার ঘটনাটি অপূর্ব রামদাসকে বলছিল।

দেশি লোক হওয়ায় অপূর্বকে বিনা দোষে কিছু ফিরিঙ্গি ছেলে লাথি মেরে রেল প্ল্যাটফর্ম থেকে বের করে দিয়েছিল। উক্ত অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গেলে শুধুমাত্র ভারতীয় বলে ষ্টেশনমাস্টার তাকে নিজের দেশের রেলস্টেশন থেকে কুকুরের মত অপমান করে তাড়িয়ে দেয়। নিজের দেশে ফিরিঙ্গিদের হাতে এভাবে চূড়ান্ত অপমানিত হতে হয়েছিল অপূর্বকে। প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে সেই ঘটনার কথাই ব্যক্ত করা হয়েছে।

৯. “তিনি ঢের বেশি আমার আপনার”- কার সম্পর্কে এই উক্তি? এমন উক্তির কারণ কী?

উত্তরঃ ‘পথের দাবী’ রচনাংশ থেকে গৃহীত উদ্ধৃতাংশে অপূর্ব সব্যসাচী মল্লিক সম্পর্কে একথা বলেছে।

অপূর্ব শিক্ষিত পুরুষ। পরাধীনতার যন্ত্রণা সে উপলব্ধি করতে পারত। কিন্তু সরাসরি ব্রিটিশদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সাহস তার ছিল না। তবে ভারতের মাটি থেকে ব্রিটিশদের উচ্ছেদ করার জন্য যে মানুষটি জীবন পণ করেছিল, সেই সব্যসাচী মল্লিককে অপূর্ব আপনজন বলে গ্রহণ করেছিল। তাই নিমাইবাবু তার আত্মীয় হওয়া সত্ত্বেও সে সব্যসাচী মল্লিককেই তার আপন বলে মনে করেছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!