সাহিত্য সঞ্চয়ন (X)

আফ্রিকা কবিতা – বিষয়বস্তু ও প্রশ্নোত্তর

দশম শ্রেণির জন্য পাঠ্য কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা আফ্রিকা কবিতা আজ আমাদের আলোচ্য বিষয়। আমরা এর আগে দশম শ্রেণির বাংলা বিষয়ে আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি কবিতাটি নিয়ে প্রাসঙ্গিক প্রশ্নোত্তর পরিবেশন করেছি। আফ্রিকা কবিতাটির আলোচনায় প্রাসঙ্গিক তথ্য সহ গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর তুলে ধরব আমরা যাতে পরীক্ষার্থীদের উপকারে আসে। এই অধ্যায় থেকে মক টেস্ট দিতে এখানে ক্লিক কর।

আফ্রিকা কবিতার বিষয়বস্তু

কবিতার প্রথম অংশে পৃথিবীর বিভিন্ন মহাদেশের উৎপত্তি প্রসঙ্গে আফ্রিকার জন্মের কথা বলেছেন কবি। প্লেটটেকটোনিক থিয়োরির কাব্যিক রূপ আছে কবিতার প্রথম অংশে। আছে আফ্রিকার নিরক্ষীয় অঞ্চলের ঘন অরণ্যের কথা। জন্মলগ্ন থেকেই আফ্রিকাকে ঘিরে রেখেছিল রহস্যময় আদিম অন্ধকার এবং হিংস্র শ্বাপদ সংকুল অরণ্য। কিন্তু বনস্পতির নিবিড় পাহারায় বন্দিনী থেকেও আফ্রিকা সভ্য পৃথিবীর উপেক্ষাকে অগ্রাহ্য করে নিজের অস্তিত্বকে বাঁচিয়ে রাখার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছিল। সেও যেন ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছিল ভয়ঙ্কর পৃথিবীকে হার মানাতে, নিজের অস্তিত্ব রক্ষার্থে।

এরপর কবি এনেছেন সাম্রাজ্যবাদী শক্তি, মানুষকে দাস বানানোর প্রসঙ্গকথা। নির্মম ঔপনিবেশিক শোষণের ফলে রক্তে আর অশ্রুতে কর্দমাক্ত হল আফ্রিকার মাটি। প্রকাশ পেল নির্মম পাশবিকতা, নির্লজ্জতা। কবিতার শেষ অংশে অপমানিত আফ্রিকার কাছে ‘যুগান্তের কবি’কে আহ্বান জানিয়েছেন ‘মানহারা মানবীর’ পাশে দাঁড়াবার জন্য। কেননা কবি মাত্রেই সুন্দরের উপাসক। কবির ক্ষমা প্রার্থনায় জগতের শুভবুদ্ধির জাগরণ ঘটবে বলে কবি বিশ্বাস করেন।

প্রাসঙ্গিক তথ্য

আফ্রিকা কবিতাটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘পত্রপুট’ কাব্যের কবিতা।
আফ্রিকা কবিতার প্রেক্ষাপটে আছে ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে মুসোলিনীর আবিসিনিয়া আক্রমণের প্রসঙ্গ
কবিতাটির রচনাকাল ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দের ৮ই ফেব্রুয়ারি।

এককথায় প্রশ্নোত্তর

১. ‘আফ্রিকা’ কবিতাটি রবীন্দ্রনাথের কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া ?
উঃ পত্রপূট

২. আফ্রিকা কবিতাটি ‘পত্রপূট’ কাব্যের কত সংখ্যক কবিতা ?
উঃ ১৬ সংখ্যক

৩. কবিতার শুরুতে কবি ‘সেই আদিম যুগ’ সম্পর্কে কোন শব্দ প্রয়োগ করেছেন ?
উঃ উদ্‌ভ্রান্ত

৪. স্রষ্টা নিজের সৃষ্টিকে বারবার যা করছিলেন –
উঃ বিধ্বস্ত

৫. আফ্রিকাকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল কে ?
উঃ রুদ্র সমুদ্রের বাহু

৬. আফ্রিকার নিরক্ষীয় অঞ্চলের ঘন অরণ্য প্রসঙ্গে কবি কোন কথাটি ব্যবহার করেছেন ?
উঃ বনস্পতির নিবিড় পাহারা ও কৃপণ আলোর অন্তঃপুর

৭. ‘তুমি সংগ্রহ করছিলে’ – এখানে কী সংগ্রহ করার কথা কবি বলেছেন ?
উঃ দুর্গমের রহস্য

৮. আফ্রিকা কীসের ‘দুর্বোধ সঙ্কেত’ চিনছিল ?
উঃ জলস্থল ও আকাশ

৯. আফ্রিকা কীভাবে ভীষণকে বিদ্রুপ করছিল ?
উঃ বিরূপের ছদ্মবেশে

১০. আফ্রিকা কবিতায় কবি আফ্রিকা সম্পর্কে কোন বিশেষণ প্রয়োগ করেছেন ?
উঃ ছায়াবৃতা

১১. কালো ঘোমটার নীচে কবি আফ্রিকার কোন রূপকে দেখেছেন ?
উঃ মানব রূপ

১২. ‘এল ওরা লোহার হাতকড়ি নিয়ে’ – ‘ওরা’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন ?
উঃ সাম্রাজ্যবাদী শক্তি

১৩. ‘লোহার হাতকড়ি’ কোন অর্থ প্রকাশ করে ?
উঃ দাসত্ব

১৪. ‘নখ যাদের তীক্ষ্ণ তোমার ——- চেয়ে’ – শূন্যস্থান পূরণ কর।
উঃ নেকড়ের

১৫. সাম্রাজ্যবাদী শক্তির অন্ধত্বের কারণ সম্পর্কে কবি কোন শব্দ ব্যবহার করেছেন ?
উঃ গর্ব

১৬. ‘কাঁটা-মারা জুতোর তলায়’ কীসের কথা বলেছেন কবি ?
উঃ কাদার পিন্ড

১৭. পুজার ঘন্টা কোথায় বাজছিল বলে জানিয়েছেন ?
উঃ মন্দিরে

১৮. কবির সঙ্গীতে কী বেজে উঠেছিল ?
উঃ সুন্দরের আরাধনা

১৯. ‘গুপ্ত গহ্বর থেকে’ কাদের বেরিয়ে আসার কথা কবি বলেছেন ?
উঃ পশু

২০. ‘আজ যখন ——– দিগন্তে প্রদোষকাল’ – শূন্যস্থান পূরণ কর।
উঃ পশ্চিম

২১. ‘যুগান্তের কবিকে’ কবি দাঁড়াতে বলেছেন –
উঃ মানহারা মানবীর দ্বারে

২২. ‘সেই হোক তোমার সভ্যতার শেষ ——–‘। শূন্যস্থান পূরণ কর।
উঃ পুণ্যবাণী

ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর

১. সংগ্রহ করছিলে দুর্গমের রহস্য –আফ্রিকা কীভাবে দুর্গমের রহস্য সংগ্রহ করছিল ?

উত্তরঃ আফ্রিকা কবিতায় কবি উল্লেখ করেছেন বিশ্বের বাকি ভূখণ্ড থেকে আফ্রিকার ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা। পাহাড়, মরুভূমি আর জঙ্গলাকীর্ণ আফ্রিকায় সূর্যালোক পর্যন্ত প্রবেশ করতে পারে না। প্রকৃতির এই দুর্গমতা আফ্রিকাকে বাইরের পৃথিবী থেকে দুর্ভেদ্য আবরণে ঢেকে রেখেছে। আফ্রিকার গহন অরণ্য ক্রমশ হিংস্র জন্তুর ভয়াবহতায় আকীর্ণ হয়। আসলে এর মাধ্যমে আফ্রিকা নিজেকে দুর্গম রহস্যময় রূপে যেন গড়ে তুলেছে।

২. এল মানুষ-ধরার দল –মানুষ ধরার দলের পরিচয় দাও।

উত্তরঃ ‘আফ্রিকা’ কবিতায় কবি ‘মানুষ ধরার দল’ বলতে সাম্রাজ্যবাদ লোভী মানুষদের বুঝিয়েছেন। তাদের হিংস্র চেহারার বর্ণণায় কবির তীব্রতা প্রকাশিত। উপনিবেশ স্থাপনের লক্ষ্যে তারা লোহার হাতকড়ি নিয়ে হাজির হয়েছে আফ্রিকায়। তাদের নখ নেকড়ের চেয়েও তীক্ষ্ণ। সাম্রাজ্যবাদী সেঈ শক্তি আপন কর্মকাণ্ডে গর্বোদ্ধত। তাদের অন্তর সূর্যালোকহীন আফ্রিকার চেয়েও তমসাঘন।

৩. এসো যুগান্তের কবি –কোন সময়ে কবি ‘যুগান্তের কবি’কে আহ্বান জানিয়েছেন ? ‘যুগান্তের কবি’কে আহ্বান জানিয়ে কী বলেছেন কবি ?

উত্তরঃ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিস্মৃত হননি সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আগ্রাসন ও যুদ্ধক্ষত সমকালীন সময়কে। সেই সময় ইউরোপের দেশে দেশে ‘গুপ্ত গহ্বর’ থেকে বেরিয়ে এল পশুরা। তখন দিনের অন্তিমকাল। ঠিক এই সময়েই কবি আহ্বান করেছেন ‘যুগান্তের কবি’কে।

কবি ‘যুগান্তের কবি’কে আহ্বান জানিয়েছেন মানহারা মানবীর পাশে দাঁড়ানোর। আফ্রিকা ও আফ্রিকাবাসীর উপর বর্বর মানুষের যে অত্যাচার হয়েছে তার জন্য সভ্য মানুষের প্রতিনিধি হয়ে ক্ষমা চাওয়ার কথা বলেছেন কবি। ইতিহাসের যে পাতা আফ্রিকার মানুষের রক্তে, অশ্রুতে কলঙ্কিত তা নির্মল হোক ক্ষমার আদর্শে।

৪. অপরিচিত ছিল তোমার মানবরূপ / উপেক্ষার আবিল দৃষ্টিতে –তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।

উত্তরঃ ‘আফ্রিকা’ কবিতায় কবি সাম্রাজ্যবাদীদের বর্বর লুণ্ঠনকে ধিক্কার জানিয়েছেন। পাশাপাশি আছে আফ্রিকার প্রকৃতির জন্য কবি-হৃদয়ের বেদনা। সৃষ্টির আদিলগ্নে প্রাচী ধরিত্রীর থেকে পৃথক হয়ে বনস্পতির ছায়াচ্ছন্ন কৃপণ আলোর অন্তঃপুরে আফ্রিকা দুর্গমের রহস্য সঞ্চয় করছিল। অচিরেই সে আরও বেশি দুর্গম, বিভীষিকাময় হয়ে ওঠে। এই প্রচণ্ডতায় ধীরে ধীরে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে তার প্রকৃত রূপ। পরে সভ্য জগতের সংস্পর্শে এলেও সভ্য সাম্রাজ্যলিপ্সুর দল আফ্রিকার মানবরূপ আবিষ্কার করতে পারেনি। আফ্রিকা তাদের কাছে ‘অপরিচিত’ই ছিল।

৫. আফ্রিকার ক্রন্দনকে কবি ভাষাহীন বলেছেন কেন ?

উত্তরঃ আফ্রিকা প্রকৃতির বিরূপতায় দুর্গম, ছায়াচ্ছন্ন। আবার সভ্যজগতের ঔদাসীন্যে সে পিছিয়ে। এরপর হয়েছে তার উপর সাম্রাজ্যবাদীর আক্রমণ, নৃশংস অত্যাচার। সেই অত্যাচারের প্রতিবাদের ভাষা আফ্রিকাবাসীর জানা ছিল না। তাই কবি আফ্রিকার ক্রন্দনকে ভাষাহীন বলেছেন।


অন্যান্য আলোচনা

প্রশ্নোত্তরের বিষয়LINK
জ্ঞানচক্ষুClick Here
অসুখী একজনClick Here
আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকিClick Here
অস্ত্রের বিরুদ্ধে গানClick Here
হারিয়ে যাওয়া কালি কলমClick Here
বহুরূপীClick Here
অভিষেকClick Here
সিরাজদৌল্লাClick Here
প্রলয়োল্লাসClick Here
পথের দাবীClick Here
অদল বদলClick Here
সিন্ধুতীরেClick Here
বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানClick Here
অস্ত্রের বিরুদ্ধে গানClick Here
নদীর বিদ্রোহClick Here
Watch Video Tutorials

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!