সাহিত্য সঞ্চয়ন (X)

পাবলো নেরুদার অসুখী একজন

অসুখী একজন বা The Unhappy One চিলিয়ান কবি পাবলো নেরুদার অন্যতম একটি শ্রেষ্ঠ কবিতা। স্পেনের গৃহযুদ্ধের পটভূমিকায় রচিত এই কবিতায় আছে যুদ্ধের কথা, ধ্বংসের পরিচয়, সর্বোপরি ইতিবাচকতার ইঙ্গিত। দশম শ্রেণির জন্য পাঠ্য এই কবিতাটিই আমাদের আজকের বিষয়। আমরা এই আলোচনায় কবিতার পরিচিতি, মূল বিষয় ও প্রাসঙ্গিক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তরগুলি দেখে নেব।

অসুখী একজন কবিতা পরিচিতি

কবির সম্পূর্ণ নাম – নেফতালি রিকার্দো রেয়েস বাসোয়ালতো
কবিতাটির অনুবাদকের নাম – নবারুণ ভট্টাচার্য
কবিতাটি পাবলো নেরুদার Extravagaria কাব্যের অন্তর্গত
অনুবাদে কবিতাটি ‘বিদেশি ফুলে রক্তের ছিটে’ গ্রন্থের অন্তর্গত

মূলকথা

স্পেনের গৃহযুদ্ধের পটভূমিতে রচিত এই কবিতায় প্রেমিক পুরুষটি তার প্রিয়তমাকে দরজায় অপেক্ষারতা অবস্থায় রেখে গৃহত্যাগ করে চলে গেছেন অনেক দূরে। একটা করে সপ্তাহ আর বছর পেরিয়ে যায়। তারপর আসে যুদ্ধ ‘এক আগ্নেয়পাহাড়ের মতো’। সেই যুদ্ধের প্রভাবে খুন হয় শিশুরা, ধ্বংস হয় বাড়িঘর। উল্টে পড়ে মন্দিরের দেবতারাও। শহরজুড়ে ছড়িয়ে থাকে কাঠকয়লা, দোমড়ানো লোহা আর রক্তের দাগ। কিন্তু অপেক্ষারতা সেই মেয়েটির মৃত্যু হয়না। সে আজও অপেক্ষা করে আছে তার প্রিয়তমের জন্য।

এককথায় প্রশ্নোত্তর

১. ‘অসুখী একজন’- কবিতাটি কার লেখা ?
উঃ পাবলো নেরুদা

২. আলোচ্য কবিতাটি বাংলায় অনুবাদ কে করেছেন ?
উঃ নবারুণ ভট্টাচার্য

৩. ‘অসুখী একজন’ কবিতাটির মোট চরণ সংখ্যা কতগুলি ?
উঃ বত্রিশটি

৪. ‘আমি চলে গেলাম দূর. . . দূরে’ – এখানে কোথায় চলে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে ?
উঃ যুদ্ধক্ষেত্রে

৫. কবিতা অনুসারে কে ‘চলে গেল’ ?
উঃ একটা কুকুর

৬. কবিতা অনুসারে ‘হেঁটে গেল’ কে ?
উঃ গীর্জার নান

৭. ‘বৃষ্টিতে ধূয়ে দিল’ –  এখানে কী ধুয়ে দেবার কথা বলা হয়েছে ?
উঃ পায়ের দাগ

৮. আলোচ্য কবিতায় কাল হিসেবে কবি কোন শব্দের ব্যবহার করেছেন ?
উঃ সপ্তাহ ও বছর

৯. ‘ঘায় জন্মালো রাস্তায়’ – রাস্তাটি কেমন ছিল ?
উঃ বৃষ্টিধোয়া

১০. আলোচ্য কবিতায় কবি পাথরের সঙ্গে কীসের তুলনা করেছেন ?
উঃ বছরের

১১. ‘সেই মেয়েটির মৃত্যু হল না’ – ‘মেয়েটি’ কে ?
উঃ অপেক্ষারতা মেয়ে

১২. কবির ভাষায় হাজার বছর ধরে কারা ধ্যানে ডুবে ছিল ?
উঃ মন্দিরের দেবতারা

১৩. আলোচ্য কবিতায় কবি কীসের উল্লেখ করেছেন ?
উঃ ঝুলন্ত বিছানা, প্রাচীন জলতরঙ্গ ও গোলাপি গাছ

১৪. ‘সব চূর্ণ হয়ে গেল’ – এরপর কবি কী বলেছেন ?
উঃ জ্বলে গেল আগুনে

প্রশ্নোত্তর পর্ব

১. ‘অসুখী একজন’ কবিতার কবি কে ? এই কবিতায় অসুখী কে ?

উত্তরঃ ‘অসুখী একজন’ কবিতার কবি হলেন চিলির বিখ্যাত কবি পাবলো নেরুদা।

আলোচ্য কবিতায় যুদ্ধোত্তর ধ্বংসস্তূপের মধ্যে প্রিয়জনের ফিরে আসার অপেক্ষারতা একটি মেয়েকে দেখা যায়। মেয়েটি এখানে যুদ্ধে স্বজন হারানো সকল অসুখী মানুষের প্রতিনিধি হয়ে উঠেছে যারা প্রিয়জনের ফিরে আসার অপেক্ষায় আশার প্রদীপ জ্বেলে রাখে। কাজেই কবিতার তাৎপর্যে ‘অসুখী’ কেবল ঐ মেয়েটি নয়, অসুখী স্বজন হারানো সকল মানুষ।

২. সে জানত না আমি আর কখনো ফিরে আসব না –কথাটির তাৎপর্য কী ?

উত্তরঃ ‘অসুখী একজন’ কবিতায় অতীতচারণার মধ্য দিয়ে একটি সময়পর্বকে তুলে ধরেছেন কবি। যুদ্ধ-পূর্ববর্তী সুন্দরতা, জীবনের সৌন্দর্যের আভাস আর তার বিপরীতে যুদ্ধ-পরবর্তী ধ্বংস, প্রিয়জন বিচ্ছেদ। কবিতায় মেয়েটি অপেক্ষা করে থাকে ধ্বংসের পরেও হয়তো তার প্রিয় স্বজন ফিরে আসবে। কিন্তু যুদ্ধ মানুষের জীবন থেকে সব কিছু কেড়ে নেয়, তাকে করে নিঃস্ব –একথা বোঝাতেই উদ্ধৃত চরণটির ব্যবহার করেছেন কবি।

৩. বছরগুলো নেমে এল তার মাথার উপর – উদ্ধৃতিটির তাৎপর্য লেখ।

উত্তরঃ ‘অসুখী একজন’ কবিতার বক্তা তার প্রিয়জনকে বাড়িতে রেখে দেশান্তরে যেতে বাধ্য হয়। তার যাওয়ার পর কেটে যায় বেশ কয়েকটা বছর। তার দীর্ঘ অনুপস্থিতি তার প্রিয়জন ঐ মেয়েটির কাছে পাথর প্রমাণ দুঃসহ ভার হয়ে দেখা দেয়। মেয়েটি অনন্ত যন্ত্রণা নিয়ে অপেক্ষায় থাকে প্রিয়জনটির ফিরে আসার। উদ্ধৃত চরণে সেই যন্ত্রণার কথাই ব্যক্ত করেছেন কবি।

৪. যারা হাজার বছর ধরে/ডুবেছিল ধ্যানে –উদ্ধৃতির মূল বক্তব্য বিশ্লেষণ কর।

উত্তরঃ যুদ্ধ মানেই মানবসভ্যতা ধ্বংসকারী। আলোচ্য কবিতাতেও যে যুদ্ধের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তাতে গ্রাম-নগর, জনপদ, স্থাপত্য ও ভাস্কর্য সবকিছুই ধ্বংস হয়ে যায়। যুগ যুগ ধরে যে উপাস্য দেবতারা মানুষের আস্থা ও ভরসার স্থল ছিল তারাও যুদ্ধের দাপটে টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে পড়ল। যে মূর্তি এতদিন মানুষের বিশ্বাসবোধের জন্ম দিয়েছে তা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। আসলে যুদ্ধের আকস্মিকতা সবকিছুকেই দিয়েছে ওলট পালট করে।

৫. যেখানে ছিল শহর –শহরটির বর্তমান পরিস্থিতির পরিচয় দাও।

উত্তরঃ ‘অসুখী একজন’ কবিতায় কবি যুদ্ধবিধ্বস্ত সর্বহারা মানুষের ছবি আঁকার পাশাপাশি একটি শহরের চিত্রও তুলে ধরেছেন। যুদ্ধের করাল গ্রাসে একটি সুন্দর শহর ভেঙেচুড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সেখানে আজ কেবল পোড়া কাঠকয়লা, বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে আছে দোমড়ানো লোহা আর অগণিত স্থাপত্য ভাস্কর্যের ভগ্নাবশেষ। রাস্তায় শুধু রক্তের দাগ। সুন্দর সেই শহরে আজ কেবল স্বজন-হারা মানুষের দীর্ঘশ্বাস। এইভাবেই কবিতায় কবি এক বিধ্বস্ত নাগরিক জীবনের চিত্র অঙ্কন করেছেন।


অন্যান্য আলোচনা

প্রশ্নোত্তরের বিষয়LINK
জ্ঞানচক্ষুClick Here
আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকিClick Here
আফ্রিকাClick Here
হারিয়ে যাওয়া কালি কলমClick Here
বহুরূপীClick Here
অভিষেকClick Here
সিরাজদৌল্লাClick Here
প্রলয়োল্লাসClick Here
পথের দাবীClick Here
অদল বদলClick Here
সিন্ধুতীরেClick Here
বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানClick Here
অস্ত্রের বিরুদ্ধে গানClick Here
নদীর বিদ্রোহClick Here

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!