সাহিত্য সঞ্চয়ন (X)

অভিষেক কবিতা -এর আলোচনা

দশম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের জন্য আমাদের আজকের আলোচনা অভিষেক কবিতা । কবিতাটি মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা বিখ্যাত একটি কাব্যের অংশ বিশেষ। আমরা এর আগে বহুরূপী গল্পের নানা তথ্য ও প্রশ্নোত্তর আলোচনা করেছি। এছাড়া ক্রমাণ্বয়ে অন্যান্য গল্প কবিতার আলোচনাও হয়েছে। তোমরা এই কবিতার ভিডিও আলোচনা দেখতে এখানে ক্লিক কর।

অভিষেক কবিতা – প্রাসঙ্গিক তথ্য

’অভিষেক’ কবিতাটি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘মেঘনাদবধ কাব্যে’র প্রথম সর্গ থেকে নেওয়া হয়েছে।
কাব্যটি নয়টি সর্গে বিভক্ত। প্রথম সর্গের নাম ‘অভিষেক’।

শব্দার্থ

অভিষেক কবিতা – প্রশ্নোত্তর পর্ব

উত্তরঃ মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘অভিষেক’ কবিতার উদ্ধৃতাংশে রাবণপুত্র ইন্দ্রজিৎ ছদ্মবেশী অম্বুরাশি-সূতা বা লক্ষ্মীদেবীর কাছে লঙ্কার কুশল জানতে চেয়েছেন।

ইন্দ্রজিতের প্রমোদ উদ্যানে এসে ছদ্মবেশী রমাদেবী ইন্দ্রজিৎকে অবগত করেন যে, রাঘবের সঙ্গে যুদ্ধে তার প্রিয় ভ্রাতা বীরবাহু বীরগতি লাভ করেছেন। আর এই কারণে পুত্রের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে রক্ষঃরাজ রাবণ যুদ্ধযাত্রার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

উত্তরঃ মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘অভিষেক’ কবিতার উদ্ধৃতাংশে ‘মহাবাহু’ হলেন রাবণ পুত্র ইন্দ্রজিৎ।

এর আগে যুদ্ধে ইন্দ্রজিৎ রাঘবদের পরাজিত ও নিহত করেছিলেন। কিন্তু সেই রাঘবদের সঙ্গে যুদ্ধে তার প্রিয় ভাই বীরবাহু বীরগতি প্রাপ্ত করেছেন শুনে ইন্দ্রজিৎ বিস্মিত হয়েছেন। তাছাড়া তিনি বেঁচে থাকতে তার পিতা যুদ্ধে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন শুনেও ইন্দ্রজিৎ বিস্মিত হয়েছেন।

বিস্মিত ইন্দ্রজিৎ ছদ্মবেশী রমাদেবীর কাছে জানতে চেয়েছেন যে, নিশাযুদ্ধে রামকে হত্যা করার পরেও তার ভাই বীরবাহুকে কে হত্যা করল আর এই সংবাদ তিনি কোথায় পেলেন ?

দশম শ্রেণির মক টেস্ট দিতে ক্লিক কর।

উত্তরঃ ‘অভিষেক’ কবিতার আলোচ্য অংশে ‘রিপুকূল’ বলতে অযোধ্যাপতি দশরথের পুত্র রাম-লক্ষ্মণ ও তাঁদের বানর সেনাদের কথা বলা হয়েছে।

উদ্ধৃতাংশের বক্তা ইন্দ্রজিৎ তার প্রমোদ উদ্যানে আনন্দমগ্ন সময় কাটাচ্ছিলেন। এদিকে যুদ্ধে তার প্রিয় ভাই বীরবাহু নিহত হয়েছে। সমগ্র লঙ্কা শোকসাগরে নিমজ্জিত হয়েছে। ইন্দ্রজয়ী ইন্দ্রজিতের মনে হয়েছে তিনি বীর রাবণের সন্তান। তিনি নিজেও বীর। অথচ লঙ্কার এই দুঃসময়ে তিনি আপন আনন্দে মগ্ন রয়েছেন –এতে জগতে অপবাদ রটবে বলে তিনি মনে করেছেন।

উত্তরঃ মেঘনাদ ইন্দ্রজিৎ প্রমোদ উদ্যানে থাকাকালীন ছদ্মবেশী লক্ষ্মীদেবীর কাছে জানতে পারেন, যুদ্ধে তার প্রিয় ভাই বীরবাহু নিহত হয়েছেন আর লঙ্কারাজ রাবণ তার প্রতিশোধ নিতে যুদ্ধে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এই খবর শোনার পর বীর ইন্দ্রজিতের মনে ক্রোধের সঞ্চার হয়েছে। সন্তান থাকতে পিতা যুদ্ধে যাবেন এটা তার কাছে অপমানকরও মনে হয়েছে। তিনি তাই পত্নী প্রমীলার কাছে বিদায় নিয়ে রণসাজে সজ্জিত হয়ে আকাশমার্গে লঙ্কার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। এই সময় তিনি ধনুকের শিঞ্জিনী আকর্ষণ করে টঙ্কার ধ্বনি করলে তার ভয়াবহতা ও গাম্ভীর্যে সমগ্র আকাশ বাতাস কম্পিত হয়। এমনকি সমুদ্রের জলরাশিতে সেই ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হয়ে ভয়াবহ কম্পনের সৃষ্টি করে। কবি ইন্দ্রজিতের এই রণসজ্জার প্রসঙ্গেই লিখেছেন ‘কাঁপিলা লঙ্কা, কাঁপিলা জলধি’।

আমাদের অ্যাপ ডাউনলোড কর।

উত্তরঃ মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘অভিষেক’ কবিতার উদ্ধৃতাংশে কথাগুলির বক্তা রাবণ।

মাইকেল মধুসূদনের ‘মেঘনাদবধ কাব্যে’ রাবণ নিয়তিতাড়িত এক ট্র্যাজিক চরিত্র। তাঁর কাছে বীরত্ব, দেশপ্রেম, শক্তি, বীরপুত্র সকলই আছে কিন্তু ভাগ্য সহায় না থাকায় তাঁকে বারেবারেই হারতে হয়েছে। ভাগ্যতাড়িত হয়েই তিনি অকালে প্রিয় ভ্রাতা কুম্ভকর্ণকে জাগিয়ে যুদ্ধে পাঠিয়েছেন। সেই যুদ্ধে কুম্ভকর্ণের মৃত্যু হয়েছে। একইভাবে হারাতে হয়েছে প্রিয় পুত্র বীরবাহুকেও। বীরবাহুর মৃত্যু রাবণের প্রতি নিয়তির বিরূপতা প্রকট করে তুলেছে। কেননা যে রামচন্দ্রকে নিশারণে ইন্দ্রজিৎ হত্যা করেছিলেন সেই রামচন্দ্র দৈব অনুগ্রহে পুনর্জীবন লাভ করেছেন। রাবণও বুঝেছেন তাঁর প্রতি নিয়তির বিরূপতা। তাই তিনি বলেন –‘কে কবে শুনেছে পুত্র, ভাসে শিলা জলে।‘ নিয়তির বারংবার আঘাতে তিনি আজ বিপর্যস্ত, তিনি রামচন্দ্রের সঙ্গে এই যুদ্ধকে ‘কাল সমর’ বলে মনে করেন। সেই যুদ্ধে প্রিয় পুত্র ইন্দ্রজিৎকে পাঠাতে নারাজ। খুব সঙ্গত কারণেই রাবণ উদ্ধৃত উক্তিটি করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!