সাহিত্য সঞ্চয়ন (X)

বহুরূপী গল্প – সুবোধ ঘোষ

দশম শ্রেণির সাহিত্য সঞ্চয়ন গ্রন্থের পাঠ্য রচনাগুলির আলোচনায় আমরা এর আগে হারিয়ে যাওয়া কালি কলম থেকে প্রাসঙ্গিক তথ্য ও নানা প্রশ্নোত্তর পেয়েছি। আজ আমাদের বিষয় বহুরূপী গল্প টি। আজ আমরা এই আলোচনায় উক্ত পাঠ্য থেকে প্রাসঙ্গিক নানা তথ্য ও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তরগুলি দেখে নেব। এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ আলোচনা দেখো আমাদের ইউটিউব চ্যানেল প্রয়াসে। ভিডিও দেখতে এখানে ক্লিক কর।

বহুরূপী গল্প – নানা তথ্য

মূলগ্রন্থঃ গল্পসমগ্র (তৃতীয় খণ্ড)

চরিত্রঃ হরিদা (মূল চরিত্র), জগদীশ, ভবতোষ, অনাদি, গল্পকথক

বিষয়বস্তু

আলোচ্য গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র হরিদা একজন বহুরূপী। তিনি কখনও বাঈজীর ছদ্মবেশে, কখনো বাউল ও কাপালিকের অভিনয়ে কখনো কাবুলিওয়ালা আবার কখনও ফিরিঙ্গি কেরামিন সাহেবের ছদ্মবেশে লোকের সামনে আচম্বিতে উপস্থিত হন। এক ঘটনায় স্কুলের মাস্টারমশাই তাকে পুলিশ ভেবে আট আনা ঘুষ দেয়। জগদীশবাবু তাকে সন্নাসী ভেবে বরণ করে নেন। এই বহুরূপীর বেশে হরিদা ইচ্ছা করলে অনেক অর্থ উপার্জন করতে পারতেন। কিন্তু অর্থের লালসা একজন শিল্পীকে নষ্ট করে দেয় – একথা বোঝে হরিদা। সে যে একজন শিল্পী হয়েই থাকতে চায়।  

প্রশ্নোত্তর পর্ব – এককথায় উত্তর

১. ‘বড়ো মানুষের কাণ্ডের খবর আমি কেমন করে শুনব ?’ ‘বড়ো মানুষ’টি কে ?
উঃ জগদীশ বাবু

২. জগদীশ বাবুর বাড়িতে সন্ন্যাসী এসে কতদিন ছিলেন ? 
উঃ সাতদিন

৩. সন্ন্যাসী একমাত্র কাকে তাঁর পায়ের ধুলো দিয়েছেন ?
উঃ জগদীশ বাবুকে

৪. সন্ন্যাসীকে বিদায় দেবার সময় জগদীশ বাবু কত টাকার ক’টি নোট দিয়েছিলেন ?
উঃ একশো টাকার একটি নোট

৫. বহুরূপী সাজে সজ্জিত হরিদা কে যারা চিনতে পারে তারা কত টাকা দেয় ?
উঃ এক আনা দু আনা

৬. চকের বাস স্ট্যান্ডের কাছে কখন একটা আতঙ্কের হল্লা বেজে উঠেছিল ?
উঃ দুপুর বেলা

৭. ‘এইবার সরে পড়ো। অন্যদিকে যাও’ হরিকে কে ধমক দেয় ?
উঃ কাশীনাথ

৮. বাঈজির ছদ্মবেশে হরিদার কত রোজগার হয়েছিল ?
উঃ আট টাকা দশ আনা

৯. ‘সে ঝোলার ভিতরে শুধু একটা বই’ – ঝোলার ভেতরে কোন বই ছিল ?
উঃ গীতা

১০. জগদীশ বাবু বিরাগীকে কত টাকা প্রণামী দিতে চেয়েছিলেন ?
উঃ একশো এক টাকা

রচনাধর্মী প্রশ্ন

উত্তরঃ ‘বহুরূপী’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র হরিদা অতি সামান্য ও দরিদ্র এক ব্যক্তি। শহরের সবচেয়ে একটি সরু গলির ভিতর ছোট্ট একটি ঘরই তার সম্বল। হরিদা বহুরূপী সেজে যে অর্থ উপার্জন করেন তাতে তার অন্ন সংস্থান হয়না। সেজন্য লেখক বলেছেন, হরিদার হাঁড়িতে শুধু জল ফোটে, ভাত ফোটে না। তবে হরিদা তার জীবনের একঘেয়ে অভাবকে মানিয়ে নিয়েছেন। নিত্য দিনের দারিদ্র্য পীড়িত জীবনের সঙ্গে হরিদা অভ্যস্ত হয়ে গেছেন।

উত্তরঃ ‘বহুরূপী’ গল্পের হরিদা অভাবী ও নিঃসঙ্গ এক মানুষ। সংসারে তিনি ছিলেন একা। তাঁর অভাবী সংসারে যেদিন খাবার জুটত সেদিন তিনি খেতেন নচেৎ নয়। তবে মানুষ হিসেবে হরিদা ছিলেন বৈচিত্র্যময়। কোনো একঘেয়ে কাজ তাঁর অপছন্দ ছিল। সেজন্য সপ্তাহে এক-দুদিন বহুরূপী সেজে রাস্তায় বের হতেন তিনি। কখনও পুলিশ সেজে, কখনও পাগল সেজে, কখনও বাঈজীর সাজে কখনও বা বাউল, কাপালিক, কাবুলিওয়ালার সাজে রাস্তায় বেরিয়ে পড়তেন। তাঁর সাজে খুশি হয়ে কেউ কেউ এক আনা, দু আনা বকশিশ দিতেন। সেই সামান্য রোজগারে তাঁর সংসার ঠিকমতো না চললেও এই স্বাধীন শিল্প-চেতনার বৈচিত্র্য হরিদার বেঁচে থাকার প্রধান অবলম্বন ছিল।

আরও দেখো

উত্তরঃ হরিদা বিরাগীর ছদ্মবেশে গিয়েছিলেন জগদীশবাবুর বাড়িতে। এই সাজ ছিল প্রচলিত সন্ন্যাসীর সাজের থেকে ভিন্ন। গৈরিক বসনধারী জটাজুটধারী কোনো সন্ন্যাসীর মতো নয়, বিরাগীর ছদ্মবেশে হরিদার পরনে ছিল খালি গায়ের উপর সাদা উত্তরীয়। মাথার চুল ছিল ফুরফুরে, শুকনো ও সাদা। পা ছিল ধুলো-মাখা। হাতে ছিল একটা ঝোলা আর সেই ঝোলায় ছিল একটা গীতা। বিরাগীর বেশে হরিদার কেবল সাজে অভিনবত্ব নয় তাঁর স্বভাবেও ছিল এক ভিন্নতা। শান্ত উজ্জ্বল দৃষ্টি যেন ঝরে পড়ছিল তাঁর চোখ দিয়ে। সব মিলিয়ে বিরাগীর বেশে হরিদাকে যেন ইহজগতের ওপার থেকে আসা কোনো মহাপুরুষ বলে মনে হচ্ছিল।

উত্তরঃ জগদীশবাবু হলেন ‘বহুরূপী’ গল্পের অন্যতম পার্শ্বচরিত্র। গল্প অনুসারে তাঁর হাতের থলিতে ছিল নোটের তাড়া। একশো এক টাকায় পূর্ণ ছিল তাঁর হাতের থলি।

জগদীশবাবু থলে ভরতি অর্থ বিরাগী সন্ন্যাসীকে প্রণামী হিসেবে দিতে চেয়েছিলেন।

না, বিরাগী জগদীশবাবুর দিতে চাওয়া উপহার গ্রহণ করেননি। বিরাগী জানিয়েছিলেন, মানুষের মধ্যেই দেবতা বিরাজমান। তাঁর বক্ষস্থলেই সকল তীর্থক্ষেত্রের সমাবেশ। তাই বাইরে কোথাও তীর্থস্থানে তাঁর যাওয়ার প্রয়োজন নেই। সে কারণেই ঐ অর্থ তাঁর কাছে মূল্যহীন।

মক টেস্ট দেওয়ার জন্য এখানে ক্লিক কর।

উত্তরঃ সুবোধ ঘোষের ‘বহুরূপী’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র হরিদা। সমগ্র গল্পে হরিদার চরিত্রের নানা দিক প্রকাশিত হয়েছে। চরিত্রটি আপনভোলা, অতি সাধারণ তাঁর জীবন যাপন পদ্ধতি। অত্যন্ত দরিদ্র ও নিঃসঙ্গ মানুষ এই হরিদা। তবে দরিদ্র হলেও তাঁর মধ্যে আছে সততা। বহুরূপী বৃত্তি অবলম্বন করলেও তিনি কখনও কাউকে ঠকাননি। আবার অর্থের লোভও নেই তাঁর চরিত্রে।

হরিদা পরাধীনতাকে মেনে নিতে পারেন না। তিনি কোনো চাকরির সন্ধান করেননি, বরং দারিদ্র্য-মাখা স্বাধীন জীবনকেই তিনি মেনে নিয়েছেন।

হরিদার জীবনের যেটি সবথেকে বড় দিক তা হল তিনি একজন প্রকৃত শিল্পী। বহুরূপী সাজে তিনি যেকোনো চরিত্রকে প্রাণবন্ত করে তুলতে পারেন। তাই পাগল সাজে পুলিশ রূপে কিংবা বাঈজীর সাজে তাকে দেখে লোকে মুগ্ধ হয়ে যায়। হরিদা সত্যিকারের শিল্পী বলেই বিরাগী রূপে জগদীশবাবুর দিতে চাওয়া অর্থ গ্রহণ করতে পারেন নি। প্রতারণা বা নিছক অর্থোপার্জনই তাঁর লক্ষ্য নয়, প্রকৃত শিল্পীর মতোই মানুষকে আনন্দ দিয়ে তিনি খুশি হন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!