সাহিত্য সঞ্চয়ন (IX)

খেয়া কবিতা – নবম শ্রেণীর বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর

আমরা এর আগে নবম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের জন্য নোঙর কবিতা থেকে প্রাসঙ্গিক তথ্য ও প্রশ্নোত্তর আলোচনা করেছি। আমাদের আজকের বিষয় খেয়া কবিতা প্রশ্ন উত্তর আলোচনা। তোমরা এই আলোচনা থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন ও তার উত্তর পাবে। আলোচনার শেষে পাবে এই কবিতা থেকে মক টেস্টের সেট। পরীক্ষা দিয়ে তোমরা দেখে নাও তোমাদের প্রস্তুতি। প্রথমে কবিতার প্রাসঙ্গিক তথ্যগুলি দেখে নাও। আমাদের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব কর।

খেয়া কবিতা – প্রাসঙ্গিক তথ্য

উৎসঃ ‘চৈতালী’ কাব্যগ্রন্থ। আলোচ্য কবিতাটি মূলকাব্যের ১৩ সংখ্যক কবিতা।
কবিতার রচনাকালঃ ১৮ চৈত্র, ১৩০২ বঙ্গাব্দ
মোট চরণ সংখ্যাঃ ১৪টি

বিষয়বস্তু

‘খেয়া’ কবিতাটিতে শান্ত পল্লিজীবন এবং সংঘাতময় নাগরিক জীবনের প্রসঙ্গ আছে। বহির্জগতের দ্বন্দ্ব-সংঘাতময় জীবনের প্রভাব পড়ে না বাংলার শান্ত পল্লিজীবনে। নাম না জানা দুটি গ্রাম পরপস্পরের দিকে চেয়ে আছে আর চিরকাল ধরে খেয়া নৌকা পারাপারের মধ্য দিয়ে গ্রামীন জীবন দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে আছে।

এককথায় প্রশ্নোত্তর

১. ‘খেয়া’ কবিতাটি রবীন্দ্রনাথের কোন কাব্যের একটি কবিতা ?
উঃ চৈতালী

২. আলোচ্য কবিতাটি ‘চৈতালী’ কাব্যগ্রন্থের কত সংখ্যক কবিতা ?
উঃ ১৩ সংখ্যক

৩. ‘খেয়া’ কবিতার চরণ সংখ্যা কয়টি ?
উঃ ১৪টি

৪. নদীস্রোতে কী পারাপার করে ?
উঃ খেয়ানৌকা

৫. ‘কেহ যায় ঘরে, কেহ আসে —— হতে’ – শূন্যস্থান পূরণ কর।
উঃ ঘর

৬. কবিতা অনুসারে দুটি গ্রামের অবস্থান –
উঃ দুই তীরে

৭. দুটি তীরের দুটি গ্রামের মধ্যে কী আছে ?
উঃ জানাশোনা

৮. খেয়ানৌকা কোন সময়ের মধ্যে আনাগোনা করে ?
উঃ সকাল থেকে সন্ধ্যা

৯. কবির ভাষায় পৃথিবীতে দ্বন্দ্বের সঙ্গে আর কী আছে ?
উঃ সর্বনাশ

১০. পৃথিবীতে গড়ে ওঠা ইতিহাস প্রসঙ্গে কবি কোন শব্দ বা শব্দগুচ্ছের ব্যবহার করেছেন ?
উঃ নূতন নূতন

১১. ‘——- মাঝে ফেনাইয়া উঠে’ – শূন্যস্থানটিতে সঠিক শব্দ বসাও।
উঃ রক্তপ্রবাহের

১২. ‘সোনার মুকুট’ প্রসঙ্গে কবি ব্যবহৃত শব্দ দুটি কী কী ?
উঃ ফুটে, টুটে

১৩. ‘সোনার মুকুট কত ফুটে আর টুটে !’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন ?
উঃ ইতিহাসের জয় পরাজয়ের কাহিনি

১৪. ‘উঠে কত হলাহল’ – প্রসঙ্গত আর কীসের কথা বলেছেন কবি ?
উঃ সুধার

১৫. ‘উঠে কত হলাহল, উঠে কত সুধা !’ বলতে কবি কীসের কথা বলতে চেয়েছেন ?
উঃ সভ্যতার সুফল ও কুফলের কথা

১৬. ‘দোঁহা পানে চেয়ে আছে’ – ‘দোঁহা’ শব্দটির অর্থ কী ?
উঃ দু’জনের

১৭. ‘দোঁহা পানে চেয়ে আছে’ – কারা চেয়ে আছে ?
উঃ দুটি গ্রাম

১৮. পৃথিবীর দ্বন্দ্বের কথা প্রকাশ পেয়েছে এমন একটি পঙক্তি উল্লেখ কর।
উঃ পৃথিবীতে কত দ্বন্দ্ব, কত সর্বনাশ

১৯. আলোচ্য কবিতায় জীবনের প্রতীক হিসেবে কীসের ব্যবহার হয়েছে ?
উঃ নদীর

২০. আলোচ্য কবিতায় ব্যবহৃত ‘টুটে’ শব্দের অর্থ কী ?
উঃ ভেঙে যাওয়া

ব্যাখ্যাধর্মী প্রশ্নোত্তর

১. “পৃথিবীতে কত দ্বন্দ্ব, কত সর্বনাশ,”—এখানে কবি কী বােঝাতে চেয়েছেন ? 

উঃ প্রশ্নোদ্ধৃত চরণটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘খেয়া’ কবিতা থেকে গৃহীত। এই কবিতায় কবি শহুরে জীবন ও গ্রামীন জীবনের একটি তুলনামূলক ছবি আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন৷ শহুরে জীবন ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে সদা চঞ্চল। শহরের আধুনিক জীবনে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য হয়তো অনেক বেশি কিন্তু সেখানে মানুষের সঙ্গে মানুষের, হৃদয়ের সঙ্গে হৃদয়ের সংযােগ নিতান্ত কম। সেখানে মানুষ সুখ-চাহিদা ও বাসনায় মত্ত। যেন তা দখলের প্রতিযোগিতা চলে। এর ফলে তারা নিজেরাই পরস্পর হানাহানি ও দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়। তার ফলেই পৃথিবীর বুকে নেমে আসে চরম সর্বনাশ।

২. এই খেয়া চিরদিন চলে নদীস্রোতে” – প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মন্তব্যটির তাৎপর্য লেখাে।

উঃ রবীন্দ্রনাথের ‘খেয়া’ কবিতায় নদী-তীরস্থ দুটি গ্রামের জানাশােনার কথা বলা হয়েছে। সেই দুই গ্রাম একে অপরের প্রতি গভীর আত্মীয়তায় পরস্পরের দিকে তাকিয়ে থাকে। উভয়ের মধ্যে সম্পর্কের মেলবন্ধন সৃষ্টি করে নদীতে পারাপার করা খেয়া নৌকা। খেয়ানৌকার নিত্য বিরামহীন যাওয়া-আসা প্রসঙ্গে উক্ত মন্তব্যটি করা হয়েছে।

নদীতে খেয়ানৌকার চলাচল আসলে সাধারণ জীবনের অবিরাম চলাকে নির্দেশ করে। নদীর দুই তীর থেকে গ্রামের মানুষেরা ঘরে যায় বা ঘর থেকে বাইরে যায়। দুটি গ্রামের মানুষের মধ্যে তৈরি হয় আত্মীয়তার সম্পর্ক। যখন বাকি বিশ্বের ইতিহাস আন্দোলিত হয় সাম্রাজ্যের ওঠা-পরা, যুদ্ধ, রক্তপাতের ঘটনায় তখন বিপরীতে খেয়া নৌকার চলাচল অব্যাহত থাকে। তার নিরন্তর যাতায়াত যেন জীবনের স্বচ্ছন্দ প্রবাহকেই নির্দেশ করে। বিশ্বে ছোটো-বড়ো রাজত্বের অবসান ঘটে কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবন একই ভাবে বহমান থাকে।

খেয়া কবিতা প্রশ্ন উত্তর

৩. ‘খেয়া’ কবিতাটির নামকরণের সার্থকতা বিচার করো।

উঃ যেকোনো রচনার ক্ষেত্রে নামকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রচয়িতা বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তার রচনার নামকরণ করে থাকেন। আমাদের পাঠ্য ‘খেয়া’ কবিতার নামকরণ কতখানি সার্থক তা আমরা আলোচনা করে দেখে নেব।

পাঠ্য ‘খেয়া’ কবিতাটিতে কবি নগর জীবন এবং গ্রাম জীবনের পারস্পরিক ছবি তুলে ধরেছেন। নদীর দুই তীরে দুটি গ্রাম এখানে সারা বাংলার গ্রামজীবনের প্রতিনিধি স্বরূপ। গ্রামের সাধারণ মানুষ সহজ, সরল ও অনাড়ম্বর জীবন নির্বাহ করে। নাগরিক জীবনের উল্লাস সেখানে নেই। উভয়ের মধ্যে ব্যবধান দূর করে সম্পর্কের সেতু তৈরি করে খেয়া।

অন্যদিকে, নগর জীবনে সুখবৈভবের কোনো অভাব নেই, অভাব শুধু মানবিক সম্পর্কের। ক্ষমতার লোভে মানুষ সেখানে একে অন্যকে আঘাত করতে পিছপা হয়না। একদিকে কোনো একটি সাম্রাজ্যের পতন হয় আবার কোনো সাম্রাজ্যের উত্থান হয়। আবার নাগরিক সভ্যতার উন্মেষে মানুষের জীবনযাত্রা যেমন উন্নত হয় তেমনি আবার ক্ষতিগ্রস্ত হয় সমাজ ও পরিবেশ। কবির ভাবনায় সভ্যতার উন্নতিতে বিষ এবং অমৃত দুই-ই উঠে আসে।

কিন্তু নাগরিক জীবনের এই উত্থান-পতনে পল্লীজীবনে এতটুকুও প্রভাব ফেলতে না। তাদের জীবনযাত্রা একইভাবে বহমান থাকে। পল্লীর মানুষের নিবিড় সম্পর্কই তাদের জীবনযাত্রার মূলভিত্তি। খেয়া তাদের এই বন্ধনের সূত্র। তাই কবিতার নাম ‘খেয়া’ সার্থক হয়ে উঠেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!