সাহিত্য সঞ্চয়ন (IX)

চন্দ্রনাথ গল্প – নবম শ্রেণির বাংলা

আমাদের আজকের আলোচ্য বিষয় নবম শ্রেণির বাংলা বিষয়ের সাহিত্য সঞ্চয়ন গ্রন্থের চন্দ্রনাথ গল্প। আমরা এর আগে অন্যান্য বিষয় থেকে প্রশ্নোত্তর আলোচনা করেছি। আজকের চন্দ্রনাথ গল্প আলোচনা থেকে ছাত্রছাত্রীরা উপকৃত হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

চন্দ্রনাথ গল্প – বিষয়বস্তু

আলোচ্য রচনায় কথক নরেশ বা নরুর বক্তব্যে পাঠ্যাংশের কেন্দ্রীয় চরিত্র চন্দ্রনাথ সম্পর্কে জানতে পারে পাঠক। নরেশের দুই সহপাঠী চন্দ্রনাথ ও হীরুকে নিয়েই এই পাঠের বিষয়বস্তু আবর্তিত। সারকুলার রোডের সমাধিক্ষেত্র থেকে বের হয়ে বাড়ি ফেরার পথে নরেশের স্মৃতিতে ভেসে ওঠে চন্দ্রনাথ, যাকে সে তুলনা করেছে ‘কালপুরুষ নক্ষত্রের সঙ্গে’। ধীরে ধীরে নরেশের স্মৃতিতে ভেসে ওঠে তার বিদ্যালয় জীবনের নানা কথা। সেখানে চন্দ্রনাথ ছাড়াও আছে হীরু, চন্দ্রনাথের দাদা, মাষ্টারমশাইয়েরা।

চন্দ্রনাথ সুস্বাস্থ্যের অধিকারীই শুধু নয়, তার আছে বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব। নরেশের বর্ণনায় সামান্য উত্তেজনাতেই চন্দ্রনাথের ললাটের শিরায় ত্রিশূলচিহ্ন অঙ্কিত হয়। স্বভাবে সে দুর্দান্ত। চন্দ্রনাথ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে পত্র লিখেছিল এই জানিয়ে যে, সে দ্বিতীয় হওয়ার পুরষ্কার নেবে না। চন্দ্রনাথের ভাবনায় হীরু প্রথম হয়েছে কারণ সে স্কুল-সেক্রেটারির ভাইপো। এ বিষয়ে সে কারো সঙ্গেই আপোষ করে না। তার দাদাও তাকে বোঝাতে অক্ষম হয়। এমনকি দাদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতেও সে পিছপা হয়না। আসলে চন্দ্রনাথ শুধু জেদি তাই নয়, তার মধ্যে আছে প্রবল আত্মাভিমান।

এরপর চন্দ্রনাথ নিজের হিসেব কষে চলে, পরীক্ষায় সে কত পেলে বাকিদের ফলাফল কী হবে এই নিয়ে। ইউনিভার্সিটির ফলপ্রকাশের পর দেখা যায় তার হিসেব প্রায় মিলে যায়। হীরু যথারীতি প্রথম হয়। স্কলারশিপ পাওয়ার উপলক্ষ্যে হীরুর বাড়িতে প্রীতিভোজের আয়োজন করা হয়েছিল। নরেশ, চন্দ্রনাথও নিমন্ত্রিত ছিল। কিন্তু চন্দ্রনাথ সেই নিমন্ত্রণে যেতে পারেনি। তার মনে হয়েছিল স্কলারশিপটা তেমন কোনো ব্যাপার নয়। চন্দ্রনাথ সেখান থেকে কোনো এক নিরুদ্দেশের পথে পাড়ি দেয়।

চন্দ্রনাথ গল্প – মনে রাখো

চন্দ্রনাথ গল্পের উৎস – আগুন উপন্যাস।
চন্দ্রনাথ গল্প চরিত্র – চন্দ্রনাথ (কেন্দ্রীয় চরিত্র), হীরু, নরেশ (গল্পকথক), নিশানাথ (চন্দ্রনাথের দাদা), মাষ্টারমশাই

এককথায় প্রশ্নোত্তর

১. ‘চন্দ্রনাথ’ রচনা অনুসারে চন্দ্রনাথের দাদার নাম –
উঃ নিশানাথ বাবু

২. ‘হীরুই সেবার ফার্স্ট হইয়াছিল’ – হীরু কে ?
উঃ সেক্রেটারির ভাইপো

৩. ‘তাঁহার কথা অবহেলা করিতে পারিনা’ – কার কথা বলা হয়েছে ?
উঃ চন্দ্রনাথের

৪. চন্দ্রনাথের স্মৃতি লেখকের মনে কেমনভাবে রয়েছে –
উঃ কালপুরুষ নক্ষত্রের মত

৫. ‘অন্ধকারের মধ্যে তাকে খুঁজিতেছি’ – কাকে খোঁজার কথার বলা হয়েছে ?
উঃ অতীতের দিনগুলিকে

৬. হেডমাষ্টারের হাতে কি থাকত ?
উঃ হুঁকা

৭. চন্দ্রনাথ রচনার কথকের নাম –
উঃ নরেশ

৮. ‘তাছাড়া সব পাশ হবে’ – কারা পাশ হবে না ?
উঃ অমিয় ও শ্যামা

৯. চন্দ্রনাথের ললাটে কি চিহ্ন ছিল ?
উঃ ত্রিশুল চিহ্ন

১০. ‘এই দাম্ভিক যেন ফেল হয়’ – কার উক্তি ?
উঃ নরেশ

১১. চন্দ্রনাথ কোন পুরষ্কার গ্রহণ করতে চায়নি ?
উঃ দ্বিতীয় পুরষ্কার

১২. ‘তুই তাহলে থার্ড ডিভিশনে যাবি’ – কে বলেছিল এ কথা ?
উঃ চন্দ্রনাথ

১৩. হীরুর অবস্থা কেমন ছিল –
উঃ বিত্তবান

১৪. হেডমাষ্টার কেমন প্রকৃতির মানুষ ছিলেন ?
উঃ শান্ত

১৫. কথাটা বলতে তোমার লজ্জায় বাধল না’ – কে বলেছিল ?
উঃ নিশানাথ বাবু

১৬. ‘গুরুদক্ষিণার যুগ আর নাই’ – বক্তব্যটি কার ?
উঃ চন্দ্রনাথের

১৭. রচনার তথ্যানুসারে সমাধিক্ষেত্রটি কোথায় ছিল ?
উঃ সারকুলার রোডে

১৮. ‘চন্দ্রনাথ’ রচনার মূল উৎস হল –
উঃ আগুন উপন্যাস

১৯. চন্দ্রনাথ চিঠিতে ‘প্রিয়বরেষূ’ কেটে যা লিখেছিল –
উঃ প্রীতিভাজনেষূ

২০. ‘সঙ্গে সঙ্গে আরও একজনকে মনে পড়িতেছে’ – নরেশের কাকে মনে পড়েছে ?
উঃ হীরুকে

২১. ‘আরও একজনকে মনে পড়িতেছে’ – বক্তার এখানে কাকে মনে পড়েছে ?
উঃ নিশানাথকে

২২. ‘সঙ্গে সঙ্গে ——- মনে পড়িতেছে’ – শূন্যস্থান পূরণ কর।
উঃ মাষ্টারমশাইকে

২৩. একটি বড়ো আয়না কার ঘরের দেওয়ালে রাখা ছিল ?
উঃ নরেশ

চন্দ্রনাথ গল্প – ব্যাখ্যাধর্মী প্রশ্ন

১. ‘অসাধারণ তাহার মুখাকৃতি’ — কার কথা বলা হয়েছে? তার মুখাকৃতির বর্ণনা দাও।

উত্তরঃ তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘চন্দ্রনাথ’ গল্প থেকে উদ্ধৃত এই অংশে চন্দ্রনাথের মুখের কথা বলা হয়েছে।

চন্দ্রনাথের দেহ সুস্থ সবল, দীর্ঘাকার, চোখের দৃষ্টি নির্ভীক। প্রথমেই চোখে পড়ে তার অদ্ভুত মোটা নাক। খুব সামান্য উত্তেজনাতেই তা স্ফীত হয়ে ওঠে। বড় বড় চোখ, চওড়া কপাল আর সেই কপালের ঠিক মাঝখানে শিরায় শিরায় রচিত ত্রিশূল চিহ্ন। কিশোর বয়সেও ললাটের মাঝখানে ত্রিশূল চিহ্ন মোটা হয়ে ফুলে ওঠে।

২. ‘হীরুই সেবার ফার্স্ট হইয়াছিল’ — হীরুর পরিচয় দাও। সে কীভাবে ফার্স্ট হয়েছিল?

উত্তরঃ তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘চন্দ্রনাথ’ গল্পে হীরু ছিল নরেশ ও চন্দ্রনাথের সহপাঠী।

হীরু ছিল স্কুলের সেক্রেটারির ভাইপো। চন্দ্রনাথ জানিয়েছিল, হীরু তার সহায়তায় ক্লাসের পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে। তার প্রাইভেট শিক্ষকও ছিলেন স্কুলেরই শিক্ষক। তিনি সে কারণে প্রশ্নপত্রটি হীরুর কাছে লুকিয়ে রাখেননি। এছাড়া খাতা দেখার সময় উত্তর বিচারের ক্ষেত্রে তিনি ইচ্ছাকৃত ভুল করেছেন। অংকের পরীক্ষার দিন হীরু চন্দ্রনাথের কাছে মিনতি করে তার খাতা থেকে তিনটি অংক টুকেছিল। এভাবেই নিজের যোগ্যতা ছাড়াই হীরু স্কুলের পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে।

৩. ‘এইটাই আমার কাছে তার স্মৃতিচিহ্ন’ — কোন্‌ স্মৃতিচিহ্নের কথা বলা হয়েছে? সেটাই শেষ স্মৃতিচিহ্ন কেন?

উত্তরঃ তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের  ‘চন্দ্রনাথ’ গল্প থেকে উদ্ধৃত এই অংশে ‘স্মৃতিচিহ্ন’ বলতে হীরুকে লেখা চন্দ্রনাথের চিঠির কথা বলা হয়েছে।

হীরু স্কলারশিপ পাওয়ার আনন্দে যে উৎসবের আয়োজন করেছিল, তাতে চন্দ্রনাথেরও নিমন্ত্রণ ছিল। কিন্তু চন্দ্রনাথ জানত নিজের যোগ্যতায় হীরু স্কলারশিপ পায়নি। তাই চন্দ্রনাথে কাছে এই উৎসবের আয়োজন, প্রীতিভোজের নিমন্ত্রণ অর্থহীন হয়ে গেছে। সে কথা জানিয়েই চন্দ্রনাথ হীরুকে চিঠি লেখে। তার বক্তব্য ছিল, স্কলারশিপ পাওয়াটাই জীবনের শেষ কথা নয়। এর জন্য উৎসবের কোনো প্রয়োজন নেই। এরপর চন্দ্রনাথ নিরুদ্দেশের পথে চলে যায়। এই চিঠিটাই হীরুর কাছে ছিল চন্দ্রনাথের শেষ স্মৃতিচিহ্ন।

৪. চন্দ্রনাথের ব্যক্তিত্বের পরিচয় দাও।

উত্তরঃ কিশোর বয়সেই চন্দ্রনাথ চরিত্রে ছিল আশ্চর্য এক ব্যক্তিত্ব। সেই ব্যক্তিত্বের ছাপ ছিল তার পড়াশোনাতেও। কোনোদিনই স্কুলের পরীক্ষায় সে প্রথম ছাড়া দ্বিতীয় হয়নি। স্কুলের পরীক্ষার ফলাফল কী হতে পারে তা সে আগে থেকেই হিসেব করতে পারে। নিজের যোগ্যতা থাকার পরেও সে পরীক্ষায় প্রথম স্থান পায়নি, দ্বিতীয় হয়েছিল। এই আশ্চর্য অবিচার মেনে নিতে পারেনি চন্দ্রনাথ। প্রতিবাদে সেকেন্ড প্রাইজ প্রত্যাখ্যান করে হেডমাস্টারকে চিঠি লিখেছিল।

চন্দ্রনাথ যেন কালপুরুষ নক্ষত্র। কালপুরুষ নক্ষত্রের মতোই তার দীপ্তি। চন্দ্রনাথ এর বলিষ্ঠ উন্নত চরিত্র, নির্ভীক দৃষ্টির সঙ্গে কালপুরুষের আকৃতির একটা আশ্চর্য সাদৃশ্য আছে। কালপুরুষের মতো এই দৃপ্ত ভঙ্গিতে সে আপনার জীবনের কক্ষপথেও যাত্রা করে চলেছে।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেল

ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে আমাদের পরামর্শ, তোমরা মূল চন্দ্রনাথ গল্পটি ভালো করে পড়ে নিয়ে আমাদের প্রশ্নোত্তর অভ্যাস কর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!